জব্বারের বলী খেলায় লড়াই ২৬ মিনিটের, উত্তেজনা অনিঃশেষ

‘সৌন্দর্য ও কৌশলের পয়েন্টে’ চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শাহজালাল

যখন ৫টা ৫৮ মিনিট, তখনই জীবনকে পায়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেন শাহজালাল। প্রথম দিকে রেফারিরা তাকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করতে চাইলেও দর্শকদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে আরেক পয়েন্টের জন্য খেলতে হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মিনিটসাতেক পরই বিকেল ৬টা ৫ মিনিটে কৌশলের দিকে এগিয়ে থাকার কথা বলে দুই পয়েন্ট দিয়ে শাহজালালকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।

চকরিয়ার জীবন বলীকে হারানোর মাধ্যমে গতবারের প্রতিশোধ নিয়ে কুমিল্লার শাহজালাল বলী চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলার ১১০তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। তবে দুই বলীর ২৬ মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে সরাসরি জীবনকে হারাতে না পারলেও খেলার ‘সৌন্দর্য ও কৌশলের পয়েন্টে’ এগিয়ে থাকায় শাহজালালকে বিজয়ী ঘোষণা করেন বিচারকরা।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে ঐতিহাসিক লালদীঘির মাঠে অনুষ্ঠিত এ বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল তার এ বিজয়কে দর্শকদের জন্য উৎসর্গ করেছেন। অন্যদিকে খেলার ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি গত আসরের চ্যাম্পিয়ন জীবন বলী।

Jabbarer Boli Khela

কুমিল্লার শাহজালাল বলীকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ও ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন নগর পুলিশের কমিশনার মাহবুবুর রহমান। একই সময়ে রানার্সআপ জীবন বলীকে ট্রফির পাশাপাশি ১৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।

এর আগে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে বেলুন উড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী এ খেলার উদ্বোধন করেন সিএমপির কমিশনার মাহবুবুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, গ্রামীণ ফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার ও ডেপুটি সিইও ইয়াসির আজমান।

Jabbarer Boli Khela

বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে প্রথম রাউন্ডের খেলা শুরু হলে ওই পর্বে অংশ গ্রহণ করে মোট ৬২ জন বলী। এতে অংশ নেন পতেঙ্গার ষাটোর্ধ খাজা আহমেদ ও হাফিজ আহমেদের পাশাপাশি স্কুলছাত্র ইব্রাহীম, বাঁশখালীর দলিল লেখক রুবেল হোসেন, রাঙ্গুনিয়ার সিএনজি চালক ইলিয়াস ও ফটিকছড়ির ফুটবল রেফারি রিয়াজ উদ্দিনের মত বিভিন্ন শ্রেণী পেশা ও বয়সের বলীরা অংশ নেন। এ গ্রুপের বিজয়ীদের প্রত্যেককে ট্রফির পাশাপাশি এক হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়।
এরপরই চ্যালেঞ্জিং রাউন্ডের খেলা শুরু হয়। এতে সরাসরি অংশ নেন ১৬ জন বলী। তাদের মধ্যে শারীরিক শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা দেখিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেন জীবন, কাঞ্চন, বজল, মোহাম্মদ হোসেন, কালাম, সাহাবউদ্দিন, কালু এবং শাহজালাল।

Jabbarer Boli Khela

এদের মধ্যে জয়ী হয়ে সেমিফাইনালে কুমিল্লার শাহজালালের মুখোমুখি হন মহেশখালীর মোহাম্মদ হোসেন। অন্য খেলায় মহেশখালীর সাহাবুদ্দীনের সঙ্গে খেলেন চকরিয়ার জীবন বলী। তাদের মধ্যে জীবন ও শাহজালাল বলী মূল চূড়ান্তে পর্বে খেলেন। প্রতীক্ষিত এ ফাইনাল খেলা শুরু হয় বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে। টানা দশ মিনিট খেলার পর দুজনেই সমান সমান হওয়ায় মূল রেফারি সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মালেক ও সহযোগী রেফারি নূর মোহাম্মদ লেদু ও জাহাঙ্গীর আলম বারবার তাদের খেলা শেষ করার তাগাদা দেন।

Jabbarer Boli Khela

এরপরই খেলা শুরু হলে তখন ঘোষণা দেওয়া হয় সরাসরি নয় কৌশলগত কারণ ও পয়েন্টের ভিত্তিতে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে। যখন ৫টা ৫৮ মিনিট, তখনই জীবনকে পায়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেন শাহজালাল। প্রথম দিকে রেফারিরা তাকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করতে চাইলেও দর্শকদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে আরেক পয়েন্টের জন্য খেলতে হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মিনিটসাতেক পরই বিকেল ৬টা ৫ মিনিটে কৌশলের দিকে এগিয়ে থাকার কথা বলে দুই পয়েন্ট দিয়ে শাহজালালকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে গতবারের হারের প্রতিশোধ নেয়ার পাশাপাশি সমাপ্তি ঘটে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলার ১১০তম আসরের।

Jabbarer Boli Khela

আয়োজকরা জানান, ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ প্রতিযোগিতার সূচনা করেন।

এবারের আসরের জন্য ৫ ফুট উঁচু বালু দিয়ে ২০ বর্গফুটের মঞ্চ তৈরি করা হয়। এ খেলা দেখতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে দুপুর থেকেই হাজার হাজার মানুষ লালদীঘির মাঠের চারপাশে ভিড় জমান। ঢোলের তালে আর কাঁসার শব্দে দর্শকদের আনন্দ দেন শ্রীধাম দাশের ব্যান্ডদল।

Jabbarer Boli Khela

এদিকে বলীখেলাকে ঘিরে বুধবার (২৪ এপ্রিল) থেকে লালদীঘির চারপাশে এক বর্গকিলোমিটারজুড়ে তিনদিনের বৈশাখী মেলা বসে। সুঁই থেকে ফুলশয্যার খাট পর্যন্ত সব ধরনের গৃহস্থালি পণ্যসামগ্রী মিলছে মেলায়। বেশি বিক্রি হচ্ছে মাটির তৈজসপত্র, বাঁশি, শিশু-কিশোরদের খেলনা, ফুল ও শলার ঝাড়ু, শীতলপাটি, হাতপাখা, গাছের চারা, মুড়ি-মুড়কি, শাড়ি, তৈরি পোশাক ইত্যাদি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!