জবানবন্দিতে আছে, তবু ইপিজেড থানার চার্জশিটে নেই খুনের দুই আসামি
স্বীকারোক্তির পরও খুনের দায়ে অভিযুক্ত দুই আসামিকে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে বাদ দিয়েছে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার পুলিশ। এদের একজন আরও ১০ মামলার আসামি চটপটি আলাউদ্দিন এবং অন্যজন ফেরদৌস নামের এক ব্যক্তি। নগরীর ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন মোবারক হোসেন হত্যামামলার বাদি আবুল কালাম।
চট্টগ্রাম নগরীর নিউমুরিং ইপিজেড এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেন গত ২০ জুন বিকেলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরগামী রোডের পাশে মুরাদ বিল্ডিংয়ের সামনে একদল দুর্বৃত্তের হাতে ছুরিকাহত হন। পেটে ও থুতনিতে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
নিহত মোবারক হোসেন পটুয়াখালীর সূর্যমুনি কাঞ্চন মল্লিকের ফজলে আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি নিউমুরিং ইপিজেড থানা এলাকার শামীম মিয়ার বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় বসবাস করতেন। ইপিজেড থানার দারোগা আশরাফুলের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন তিনি। এ কারণে অপরাধীদের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল। এর মধ্যে এলাকার চিহ্নিত অপরাধী হিসেবে পরিচিত আব্দুল কাইয়ুম, ফেরদৌস আর চটপটি আলাউদ্দিনের সঙ্গে নিহত মোবারকের বিশেষ সখ্যতা ছিল। অভিযোগে জানা যায়, সামান্য কথা-কাটাকাটির জের ধরে এরাই মোবারক হোসেনকে ছুরি দিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহত মোবারক হোসেনের ভাই আবুল কালাম বাদি হয়ে ইপিজেড থানায় মামলা দায়ের করেন। বাদি অভিযুক্তদের মধ্যে আব্দুল কাইয়ুম ছাড়া কাউকে চেনেন না— এ কারণে অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
জানা যায়, মামলা দায়েরের পরে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা আব্দুল কাইয়ুমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জবানবন্দিতে কাইয়ুম স্বীকার করেন, ঘটনাস্থলে ফেরদৌসসহ ১০ মামলা ও ৭টি জিডির আসামি চট্পটি আলাউদ্দিনও ছিল। তারা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়।
মামলার বাদি আবুল কালাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূল আসামি কাইয়ুম তার জবানবন্দিতে বলেছে ফেরদৌস ও আকবরশাহ থানার ১০ নং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী চটপটি আলাউদ্দিন ঘটনাস্থলে থেকে খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। ওসি ও মামলার আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) টাকা নিয়ে তাদের ধরছেন না। এখন অভিযোগ থেকেই বাদ দিয়ে দিয়েছেন।’
জানা গেছে, আকবর শাহ থানার ১০ নং ওয়ার্ডের উত্তর কাট্টলী আক্কেল আলী মুন্সির বাড়ি শেখ আহমদের ছেলে আলাউদ্দিন প্রকাশ চটপটি আলাউদ্দিন। তার বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানা, ডবলমুরিং থানা, আনোয়ারা থানা ও কোতোয়ালী থানায় অন্তত ১০টি মামলা আছে। তার বিরুদ্ধে সাতটি জিডি আছে পুলিশ বাদি হয়ে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) হামিদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তদন্তে ফেরদৌস আর আলাউদ্দিনের নাম পাওয়া যায়নি তাই তাদের নাম আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘কোর্টে উকিল মিসগাইড করে তাদের (ফেরদৌস আর আলাউদ্দিন) এর নাম বলিয়েছে।’
উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) হামিদুল আলম প্রশ্ন রেখে দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদককে বলেন, ‘নিউজের জন্য বাদী থেকে কতো পেয়েছেন?’
এদিকে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর নূরুল হুদা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মামলা এখনও তদন্তে আছে। তার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
হত্যামামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূল আসামি তো আমাদের কাছে আছে। সে একজনের নাম বলেছে। তদন্ত ছাড়া তো কাউকে ধরা যাবে না।’
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে এই মামলার এমই (মেমোরেন্ডাম ইভিডেন্স) বাংলায় সাক্ষ্যের স্মারকলিপি অনুমোদন দেন উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) হামিদুল আলম।
আরএ/সিপি