জন্মদিনের ভালোবাসায় সিক্ত মাশরাফি

মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। পরিসংখ্যানের বিচারে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনিই সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। চলে এসেছেন ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে, হয়তো খেলবেন আর গুটিকতক ম্যাচ। প্রায় ২০ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যা দিয়েছেন, তা তাকে পরিণত করেছে কোটি হৃদয়ের ভালোবাসায়। আজ তিনি পা দিলেন ৩৭ বছরে।

অধিনায়কের জন্মদিনের পাশাপাশি জুনিয়র মাশরাফি সাহেল মোর্ত্তজার জন্মদিন। ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইল শহরের আদালতপুরে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন মাশরাফি। ক্রিকেট অঙ্গনের উজ্জ্বল এই নক্ষত্র ৩৬ বসন্ত পেরিয়ে ৩৭ বসন্তে পা রাখলেন। ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মাশরাফি-সুমি দম্পতির বিয়ে হয়। ২০১৪ সালের আজকের এই দিনে (৫ অক্টোবর) তাদের ঘরে আলো করে আসে তাদের দ্বিতীয় সন্তান সাহেল মর্তুজা। ৫ বছর পেরিয়ে ৬ বছরে পা রাখছে সাহেল মুর্তজা।

মাশরাফির সাথে তাঁর ছেলে সাহিলের জন্মদিনও আজ।
মাশরাফির সাথে তাঁর ছেলে সাহেলের জন্মদিনও আজ।

১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন ও হামিদা মোর্ত্তজা বলাকার বড় ছেলে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা জন্মগ্রহণ করেন। নড়াইল শহরের আদালতপুরে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরিবারসহ নড়াইলবাসীর কাছে ‘কৌশিক’ নামেই পরিচিত। তবে মাশরাফির জন্মদিন কখনো ঘটা করে পালন করা হয় না। মাশরাফির যখন এক বছর বয়স, তখন কেক কেটে জন্মদিন পালন করা হলেও পরবর্তীতে আর কখনো সেইভাবে পালন করা হয়নি। এখন, এতিম মানুষের মাঝে খাবার, টাকা-পয়সা দেওয়ার মধ্য দিয়ে মাশরাফির জন্মদিন পালন করা হয়।

এদিকে, মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা ও সাহেল মোর্ত্তজার জন্মদিন উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন অধিনায়কের ভক্তরা। এদিকে, সংসদ সদস্য মাশরাফির জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আনন্দ র‌্যালি, কেককাটার আয়োজন করা হলেও এসব কর্মসূচি পালন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

অধিনায়ক মাশরাফি:
২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পুনরায় অধিনায়কত্ব পেয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। তার অধীনে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে টাইগাররা, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পৌঁছেছে সেমিফাইনালে আর ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে হয়েছিল রানার্সআপ।

এছাড়া চলতি বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপাও জিতেছেন তিনি। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলোকে হারানো। শ্রীলঙ্কার মাটি থেকে কোনো সিরিজ না হেরে দেশে ফেরার সাফল্যের দেখাও মিলেছে মাশরাফির অধিনায়কত্বে। তবে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে মাত্র ৩ জয় পাওয়ায় মেটেনি প্রত্যাশা।

শৈশবে মায়ের পাশে মাশরাফি
শৈশবে মায়ের পাশে মাশরাফি

তবু ইতিহাস থেকে মুছে যায়নি গত পাঁচ বছরের অসাধারণ সব সাফল্যের গল্প। যেমনটা কখনোই দেশের ক্রিকেট ইতিহাস থেকে কখনোই মুছবে না মাশরাফি বিন মর্তুজার নাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটার অনেক সাফল্যের রুপকার মাশরাফি হয়ে থাকবেন ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

অধিনায়কত্বের বাইরে খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারও বেশ সমৃদ্ধ মাশরাফির। এখনও পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ২১৭ ম্যাচে তার শিকার ২৬৬ উইকেট, ৫ উইকেট নিয়েছেন একবার, ৪ উইকেট সাতবার। এছাড়া ব্যাট হাতেও ওয়ানডে ক্রিকেটে রয়েছে ১৭৮৬ রান।

২০০৯ সালের পর আর খেলতে পারেননি টেস্ট ক্রিকেট। প্রায় দশ বছর আগে সাদা পোশাকে শেষ টেস্ট খেললেও, দেশের পেসারদের মধ্যে তিনিই এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। ৩৬ ম্যাচে তার ঝুলিতে রয়েছে ৭৮টি উইকেট। এ ফরম্যাটে তার রান সংখ্যা ৭৯৭। এছাড়া কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ৫৪ ম্যাচে ৪২ উইকেটের সঙ্গে ৩৭৭ রান করেছেন মাশরাফি।

তার অধীনে বাংলাদেশ দল ৮৫টি ওয়ানডে খেলে জিতেছে ৪৭টিতে, যা কি না দেশের ইতিহাসে যেকোনো অধিনায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চ। টি-টোয়েন্টিতে ২৮ ম্যাচে ১০ জয় নিয়েও বাংলাদেশের অন্যান্য অধিনায়কদের চেয়ে ওপরেই অবস্থান করছেন তিনি। এছাড়া ২০০৯ সালে টেস্ট ক্রিকেটে তার প্রথম অধিনায়কত্বের ম্যাচেও জিতেছিল বাংলাদেশ দল। সে ম্যাচের পর ইনজুরির কারণে আর সাদা পোশাকে খেলতে পারেননি দেশের ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা এ অধিনায়ক।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক প্রথমের শুরু যার হাত ধরে, সেই মাশরাফির ও তাঁর ছেলের জন্মদিনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পক্ষ থেকে বাবা-পুত্রকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!