ছোট ভূমিকম্পের বড় বিপদ, তছনছ হয়ে যেতে পারে চট্টগ্রামও

সোমবার ভোরে সবাই যখন ঘুমে, ঠিক তখনই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো চট্টগ্রাম। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে গেল অনেকেরই। আতঙ্কে অনেকে বেরিয়ে পড়েন ঘর থেকে। এর আগে রোববার বিকেলেও এক দফা ভূমিকম্পে দুলেছে চট্টগ্রাম।

মাত্র ১২ ঘন্টার ব্যবধানে দুই দফা ভূমিকম্পে কাঁপলো চট্টগ্রাম। রিখটার স্কেলে প্রথম দফার ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ১ হলেও পরের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল আরও বেশি— ৫ দশমিক ৮। দুই ভূমিকম্পেরই উৎসস্থল ভারতের মিজোরাম রাজ্য। এই রাজ্যটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী।

রোববার (২১ জুন) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ৪৬ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে চট্টগ্রামসহ দেশের পূর্বাঞ্চল ও ভারতের মিজোরাম রাজ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুসারে, মিজোরামের আইজল জেলার জনবহুল শহর দারলবনের ২৪ কিলোমিটার দূরে ছিল এর উৎপত্তি। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১।

অন্যদিকে সোমবার (২২ জুন) ভোর রাত ৪টা ৪০ মিনিট ৫২ সেকেন্ড দ্বিতীয় দফায় ভূমিকম্প হল চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলাসহসহ আশেপাশের এলাকায়। মিজোরামেরই উত্তর বানলাইফাই এলাকার ১৮ কিলোমিটার দূরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৮।

এর আগে গত বৃহস্পতিবারও (১৮ জুন) সারা দিনে যে তিনবার ভূমিকম্প হয়েছিল সেগুলোর শেষটিও ছিল মিজোরাম। যার রিখটার স্কেল ছিল ৫ দশমিক শূন্য।

ছোট ভূমিকম্পের বড় বিপদ, তছনছ হয়ে যেতে পারে চট্টগ্রামও 1

ভূ-তত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন ধরেই আশঙ্কা করে আসছেন, মৃদু হালকা কিংবা মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের অশনি সংকেত বহন করে। ভূ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, মাঝেমধ্যে হালকা মাত্রার ভূকম্পন-প্রবণতা এবং টেকটোনিক প্লেটের সঞ্চালনের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ভূ-তাত্ত্বিককরা বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলজুড়ে অদূর ভবিষ্যতে শক্তিশালী মাত্রায় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন।

বাংলাদেশ ও ভারত, মিয়ানমার, নেপালসহ আশপাশের বিশাল অঞ্চল সুপ্ত হলেও ভূমিকম্পের বলয়ে বা জোনে অবস্থিত। ভূমিকম্পের আশঙ্কাপূর্ণ দীর্ঘ ফাটল লাইন বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকার আশপাশ এলাকা, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে গেছে। বঙ্গোপসাগর উপকূলের কাছাকাছি এলাকাও ভূমিকম্প বলয়ে অবস্থিত।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্রের এক জরিপ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ভূ-স্তরের পাটাতনে (টেকটোনিক প্লেট) ফাটলের কারণে ইউরোশিয়ান ও ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটের ভূমিকম্পের জোনের মধ্যেই রয়েছে চট্টগ্রাম। এ প্লেট দুটি অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ কারণে ঘন ঘন হালকা থেকে মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প হচ্ছে।

ভূ-তত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের গবেষণা বলছে, ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, ঢাকা ও কুমিল্লা বেল্ট বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূ-পাটাতনের (টেকটোনিক প্লেট) একটি ফাটল বা ফল্ট লাইন চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূল হয়ে আন্দামান পর্যন্ত চলে গেছে। অনেকগুলো ভূ-ফাটল লাইন, ভূমিকম্পে উৎসস্থল (ইপি সেন্টার) চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে কাছাকাছি অবস্থানে সক্রিয় রয়েছে।

অতীতে বাংলাদেশসহ আশপাশ অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৮ মাত্রারও অধিক পয়েন্টে প্রচণ্ড শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, সচরাচর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে ৫০ কিংবা ১০০ অথবা ১৫০ বছর পর পর শক্তিশালী ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!