ছেলেসহ কর্ণফুলী গ্যাসের সেই আইয়ুব খানের একাউন্ট ফ্রিজ করতে সব ব্যাংকে চিঠি

যার হুমকি দেওয়ার ১৬ দিনের মাথায় চাকরি গেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের, হুমকিদাতা সেই আইয়ুব খান চৌধুরী এবং তার ছেলে আশিকুল্লাহ চৌধুরীর সব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আইয়ুব খান চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক।

এনবিআর-এর সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এই নির্দেশনা সম্বলিত চিঠি পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে এ সংক্রান্ত পরিপালন প্রতিবেদন জরুরিভিত্তিতে জানাতে বলা হয়েছে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে আনা অনেকগুলো অভিযোগ বর্তমানে অনুসন্ধান করছে।

২০১৪ সালের ১ অক্টোবর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডি হিসেবে নিয়োগ পান আইয়ুব খান চৌধুরী। সেখানে তার দুই ছেলেকে নিয়োগ দিতেও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়। বড় ছেলে আশিকুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়োগ দিতে বোর্ডের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেন আইয়ুব খান। উপ-ব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদের জন্য পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক হলেও জব্দ করা আশিকুল্লাহ চৌধুরীর ব্যক্তিগত নথিতে অভিজ্ঞতার সনদ খুঁজে পায়নি দুদক। এমনকি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদেও অভিজ্ঞতার সনদ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আইয়ুব তার ছোট ছেলে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কেজিডিসিতে নিয়োগ দিতেও নানান অনিয়মের আশ্রয় নেন।

দুদকের অনুসন্ধানে দুই ছেলের পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য একজনকে টার্মিনেট করা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখা, জনবল কাঠামো লঙ্ঘন করার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে। এছাড়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

এরকম আরও বেশ কিছু অভিযোগের তদন্ত শেষ করেছেন দুদক থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতি তথ্যপ্রমাণ পেয়ে কেজিডিসিএলের সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশও করেন ওই দুদক কর্মকর্তা। এই তদন্ত প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবরে দাখিল করার পর গত ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনের চট্টগ্রামের খুলশীর ভাড়া বাসায় নিচে এসে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেন কেজিডিসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং পেট্রোবাংলার পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরী এবং কেজিডিসিএলের আরেক কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ। দারোয়ানের উপস্থিতিতে আইয়ুব খান চৌধুরী এ সময় বলেন, শরীফ উদ্দিনের কারণে তার জীবন ধ্বংস হয়েছে। তিনি আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে নিউজ করিয়েছেন। দুদকে কিভাবে চাকরি করেন দেখে নেবেন আইয়ুব খান। চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে তার মতো অনেকের জীবন ধ্বংস করেছেন শরীফ উদ্দিন।

ওইদিনের হুমকির ১৬ দিনের মাথায় চাকরি হারান দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!