ছেলের উদাহরণ টেনে ডা. বাসনা মুহুরী জানালেন, এখনও অনেকে অটিজমকে বুঝতে পারে না

শনিবার চট্টগ্রামে পালিত হবে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

সালটা ১৯৯০। আমার ছেলে অর্ণবের বয়স তখন ৮/৯ মাস হবে। অর্ণব (অন্তু) নাম বলে ডাকলে তেমন কোন সাড়া দিত না। হঠাৎ হয়তো বা একটু তাকাতো। তখনতো অটিজম শব্দের সাথে পরিচিত হইনি। কিন্তু এটা বুঝতে পেরেছিলাম অন্তু তার সমবয়সী শিশুদের মত রেসপন্স করে না। একা থাকতে পছন্দ করে। বাচ্চা বড় হচ্ছে। কিন্তু চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে হাঁটে। বিছানায় উল্টো হয়ে গড়াগড়ি দেয়। তখন বুঝতে পারিনি আমার বাচ্চার কী সমস্যা। শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে কোন সুরাহা হয়নি। ১৯৯২ সালের শেষের দিকে তখন অর্ণবের বয়স তিনের কাছাকাছি। পেডিয়াট্রিকসের অধ্যাপক ডা. এখলাছুর রহমানকে দেখাই। তিনি আড়াই ঘন্টা আমার বাচ্চাকে পর্যবেক্ষণ করেন। শেষে জানান আমার বাচ্চা অটিজমে আক্রান্ত। পরামর্শ দেন আমাদেরকেই তার গাইড হতে। জানান, এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। এসব শুনে আমরা যেন অথৈ সাগরে পড়ে যাই।

কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বাসনা মুহুরী। তার ছেলে অর্ণবই অটিজমে আক্রান্ত।

তিনি বলেন, ‘আমার মত অনেকে এখনও এ অটিজমকে বুঝতে পারে না। কিন্তু আমাদের কাজ ও প্রচেষ্টা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরা অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চাদের অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা ও সাহস জোগাতে পেরেছি।’

‘এমন বিশ্ব গড়ি যেন অটিজমদের প্রতিভা বিকশিত হয়’— এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শনিবার (২ এপ্রিল) বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত হবে। আর এ দিবসকে সামনে রেখে শুক্রবার (১ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশন।

ডা. বাসনা মুহুরী আরো বলেন, অটিজম এ শব্দটি এখন বহুল পরিচিত একটি শব্দ। সিডিসি-আমেরিকার পরিসংখ্যান মতে বর্তমানে প্রতি ৪৪ জনে একজন অটিজন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। ছেলেদের মধ্যে প্রতি ২৭ জনে একজন এবং মেয়েদের মধ্যে প্রতি ১১৬ জনে একজন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঠিক পরিসংখ্যান জানা না থাকলেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এর হার ০.৮% থেকে ৩%। আমাদের দেশে প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে কমপক্ষে ১৭ জন শিশু অটিজমে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতি ১০ হাজার ছেলেশিশুর মধ্যে ২৪ জন এবং প্রতি ১০ হাজার মেয়ে শিশুর মধ্যে প্রায় ১০ জন অটিজমে আক্রান্ত।

ডা. বাসনা মুহুরী বলেন, অটিজমের জন্য কোন কারণ দায়ী— এটা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে এটা জানা গেছে, এর পেছনে অনেকগুলো কারণ যুক্ত থাকতে পারে— জেনেটিক বা বংশগত, পরিবেশগত প্রভাব যার অন্যতম। তাছাড়া গর্ভকালীন এবং প্রসবকালীন নানা জটিলতা, নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণ, জন্মের সময় কম ওজন ইত্যাদিও প্রভাব ফেলতে পারে।

তিনি আরো বলেন, অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চারা একা থাকতে পছন্দ করে, অন্যের চোখে চোখ রেখে তাকায় না। অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারে না। মৌখিক বা অমৌখিক যোগাযোগ করতে পারে না বা দেরিতে কথা বলে বা কথা বলা শুরু করেও কেউ কেউ তা হারিয়ে ফেলে। একই কথা বা শব্দ বার বার বলতে থাকে, একই নিয়মে চলতে পছন্দ করে। চারপাশের কোনো পরিবর্তন পছন্দ করে না বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। একই আচরণ বারবার করতে থাকে যেমন— অস্বাভাবিক হাত নাড়ানো, অকারণে একইভাবে দুলতে বা ঘুরতে থাকে। বিশেষ কোনো শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ, স্বাদ, আলো বা রং এর প্রতি অতিমাত্রায় বা কম মাত্রায় সংবেদনশীলতা দেখায়।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শনিবার বিকেলে দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনষ্টিটিউটে অটিজম শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ। উপস্থিত ছিলেন সভাপতি অধ্যাপক ডা. বাসনা মুহুরী, নির্বাহী সভাপতি খোরশেদুল আলম কাদেরী, সহ- সভাপতি রোসাঙ্গীর বাচ্চু, সহ-সভাপতি অজয় শংকর পারিয়াল, যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত বিকাশ চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক টিংকু চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ড. সুদীপ পাল প্রমুখ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!