ছেলেধরা গুজব রটালে কঠোর হাতে দমনের হুঁশিয়ারি সিএমপির

ছেলে ধরার গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সিএমপি। পাশাপাশি এসব গুজব বন্ধে বিভিন্ন সতর্কতামূলক প্রচার অভিযানও চালানো হচ্ছে।

বুধবার (২৪ জুলাই) দুপরে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (সদর) শ্যামল কুমার নাথ।

তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিনে দেশের র্সবত্র একটি ভয়ঙ্কর মিথ্যা গুজব অত্যন্ত সুকৌশলে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছ। ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করতে মানুষের মাথা ও রক্ত প্রয়োজন’- এমন অদ্ভুত কথা কোন স্বাভাবিক বুদ্ধির মানুষ এক মুহূর্তের জন্য বিশ্বাস করতে পারে না! তবু গত কয়েক দিনের ঘটনা প্রবাহে এটা সুস্পষ্ট একটি অশুভ চক্র দেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করার জন্য এমন গুজব ছড়াতে তৎপর রয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাংলাদেশের উন্নয়নের এক নতুন মাইলফলক। আধুনিক প্রযুক্তির বিস্ময় এই পদ্মা সেতু প্রকল্প। এমন একটি আধুনিক প্রযুক্তির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মধ্যযুগীয় কুসংস্কার মিশ্রিত এক মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশের এই অর্জনকে কলঙ্কিত করতে কোন একটি শক্তি কাজ করছে।’

শ্যামল কুমার নাথ আরো বলেন, ‘ছেলেধরা বা বাচ্চা চুরির গুজবের ঘটনায় অনেক ব্যক্তি আহত বা নিহত হয়েছেন তাদের এরূপ কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আহত ও নিহত সকলেই নিরীহ মানুষ। গুজবের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাচ্চা চুরির অলীক অভিযোগে গণপিটুনির শিকার যে কেউ হতে পারে। এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে যেখানে বাবাকে ছেলে চুরির কারেণে গণপিটুনিতে হতাহত করা হয়েছে। আপনি বা আপনার কোন প্রিয়জন এরুপ কোন ভয়ঙ্কর পরিণতির শিকার হতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীতে এরকম দুটি ঘটনা ঘটেছে, ১ জন পুরুষ ও ১ জন নারী আহত হয়েছেন। উভয় ঘটনার নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে এবং ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছ। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্ট চলছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে সকল নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, এই মিথ্যা অদ্ভুত গুজবে বিশ্বাস করে এবং বিভ্রান্ত হয়ে কেউ যদি কোন ব্যক্তিকে আহত করেন আপনার বিরুদ্ধে মামলা হবে। যদি কেউ নিহত হন তবে আপনি হত্যা মামলার দায়ে অভিযুক্ত হবেন।’

উপ-কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, ‘এরকম মিথ্যা গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফেইসবুক, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ইত্যাদি সামাজিক ও গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রচার চালানো হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তি, মসজিদের ইমাম ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধে প্রচার করা হচ্ছে। কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে মিথ্যা গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। শহরে মাইকিং করা হচ্ছে। স্কুল কলেজের আশেপাশে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। উঠান বৈঠক ও অ্যান্টি ক্রইম সভা করা হচ্ছে। স্কুল কলেজে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-অভিভাবকদের সাথে কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি যারা এসব গুজব ছাড়াচ্ছে তাদেরকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

সিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নামে মিথ্যা গুজব প্রতিহত করার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। কোথাও যদি কারো আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়,তৎক্ষণাৎ পুলিশকে জানান। পুলিশ অফিসারদের মোবাইল নম্বর সকলকে দেওয়া আছে। এছাড়া অতি সহজে ৯৯৯ এ ফোন করতে পারেন অথবা সিএমপি কন্ট্রোল রুম ০৩১-৬৩০৩৭৪ ও ০১৬৭৯১২৩৪৫৬ এ ফোন করতে পারেন। পুলিশ তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেবে। কিন্ত আইন নিজের হাতে তুলে নিলে আপনি নিজে দোষী হবেন, মামলার আসামি হবেন। সকলের সহযোগিতায় আমরা ছেলে ধরা সংক্রান্ত মিথ্যা গুজবের অবসান ঘটিয়ে নিরাপত্তা ও স্বস্তির পরিবেশ নিশ্চিত করব।’

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এমএম মেহেদী হাসান, উপ-কমিশনার (বন্দর) হামিদুল আলম, উপ-কমিশনার (সিটি এসবি) আবদুল ওয়ারিশ, উপ-কমিশনার (ডিবি-উত্তর) মিজানুর রহমান, উপ-কমিশনার (ডিবি-বন্দর) এসএম মোস্তাইন হোসেনসহ বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!