ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে হত্যার পর আত্মহননের নাটক সাজান মা

চুরির অভিযোগ পেয়ে ছেলে হাছানকে শাসন করতে গিয়ে বেধড়ক মারধর করেন মা কুলসুম। মারধরের এক পর্যায়ে লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে মাথায় আঘাত পায় হাছান। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যায় সে। ছেলে মারা যাওয়ার পর তার লাশ ঘরের ভেন্টিলেটরের লোহার সঙ্গে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন কুলসুম।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েন কুলসুম। ছেলে হত্যায় জড়িত থাকায় মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) মা কুলসুম বেগম (৩৮) ও মামা ফারুক ইসলামকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে আকবরশাহ থানা পুলিশ।

নিহত কিশোর মো. হাছান (১৪) নগরীর পাহাড়তলী থানার ওয়ার্লেস কলোনি এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেনের ছেলে। তাদের বাড়ি মাগুরা জেলায়।

জানা গেছে, হাছান চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে তার মামা নুরনবী ইসলাম সোহেলের কুলিং কর্নারে গিয়ে মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকা চুরি করে। এরপর পালিয়ে শহরে মায়ের বাসায় চলে আসে। সোহেল বিষয়টি কুলসুমকে জানানোর পর তিনি ক্ষুব্ধ হন। সোমবার (৮ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে ছেলেকে ধাক্কা দেন তিনি। এতে হাছান ছিটকে পড়ে খাটের লোহার অ্যাঙ্গেলে মাথার পেছনে গুরুতর আঘাত পায়। এর পরপরই রক্তক্ষরণ হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে হাছান। ছেলের সাড়াশব্দ না পেয়ে কুলসুম ভয় পেয়ে যান।

পরে ভাই ফারুককে নিয়ে ছেলের লাশ ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে দেন বাসার ভেন্টিলেটরের লোহার সঙ্গে। এরপর প্রতিবেশী ও পুলিশকে জানান, ছেলে আত্মহত্যা করেছে।

হাছানের বাবা বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে চট্টগ্রাম নগরীর চার নম্বর রুটের বাসের চালকের সহকারী হিসেবে একসময় চাকরি করত। কিন্তু বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা চুরির অভিযোগে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর কুলসুম তাকে দৈনিক ১৫০ টাকা বেতনে হাটহাজারী উপজেলায় একটি কুলিং কর্নারে চাকরি নিয়ে দেন। ওই কুলিং কর্নারটি কুলসুমর বাবার।’

তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) ভোর ৬টার দিকে কুলসুমের ভাই ফারুক বাসায় গিয়ে জানান, হাছান গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে আমি দ্রুত বাসায় যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। এর আগেই স্থানীয় লোকজন বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে।’

এ ঘটনায় বেলাল হোসেন বাদী হয়ে কুলসুম ও ফারুককে আসামি করে আকবরশাহ থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ কুলসুম ও ফারুককে তাদের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।

আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘ঘটনার অনুসন্ধানে আমরা জানতে পারি, টাকা চুরির অপরাধে হাছানকে বেধড়ক মারধর করেন কুলসুম। একপর্যায়ে ছেলেকে ধাক্কা দেন তিনি। এতে হাছান ছিটকে পড়ে খাটের লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে লেগে মাথার পেছনে গুরুতর আঘাত পায়। এতে রক্তক্ষরণ হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে হাছান। ছেলের সাড়াশব্দ না পেয়ে কুলসুম ভয় পেয়ে যান। পরে কুলসুমা তার ভাই ফারুককে ডেকে আনেন। তখন দু’জনে খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আত্মহত্যা হিসেবে সেটাকে প্রচারের পরিকল্পনা করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দু’জন মিলে হাছানের মৃতদেহ ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে বাসার ভেন্টিলেটরের লোহার রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। রাত পৌনে ২টার দিকে হঠাৎ তারা বাসার বাইরে এসে চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। প্রতিবেশী আসমা আক্তার এলে তাকে বাসার বাইরে রেখে দরজার ফাঁক দিয়ে ওড়না কেটে লাশ নিচে নামায়। একজন ডাক্তারকেও ডেকে আনা হয়। ডাক্তার এসে হাছানকে মৃত ঘোষণা করেন।’

ওসি মো. ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘মঙ্গলবার কুলসুম ও ফারুককে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। কুলসুম হত্যাকাণ্ড এবংপরবর্তী ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত দু’জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!