ছুটির দিনে জয়নালের ফ্ল্যাটই হয়ে উঠতো নির্বাচন কমিশন!

নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন ২ দিনের জন্য কোতোয়ালী থানার দেওয়ানবাজার সাব এরিয়া এলাকার আমেনা মঞ্জিলের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটেই অফিসকে নিয়ে আসতেন। সেই ফ্ল্যাটে নির্বাচন কমিশনের অফিস থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, সিগনেচার প্যাডও আনতেন। সপ্তাহের সরকারি বন্ধের ২ দিন শুক্রবার ও শনিবারসহ বন্ধের দিনগুলোতে নিজ ফ্ল্যাটে বসে জাতীয় পরিচয়পত্রের যাবতীয় প্রাথমিক কার্যক্রম (ডাটা ক্রিয়েট) সম্পন্ন করতেন।

জয়নাল এই দায়িত্ব পালন শেষে সব তথ্য ঢাকার নির্বাচন কমিশন অফিসের এনআইডি শাখায় কর্মরত সাগরের কাছে মেইলে পাঠিয়ে দিতেন। তারপর অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে নির্বাচন কমিশনের ব্যবহৃত ল্যাপটপ সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে তথ্য আপলোডসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতেন সাগর। এরপর জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রিন্ট কপি এস এ পরিবহনের (কুরিয়ার) মাধ্যমে চট্টগ্রামে জয়নালের কাছে পাঠাতেন সাগর।

আর গ্রাহক সংগ্রহ ও পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করতেন সত্য সুন্দর দে, বিজয় দাশ ও সীমা দাশ। তারা চট্টগ্রাম, ঢাকা, কক্সবাজারের বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রত্যেকটি এনআইডি কার্ডের জন্য ৫০-৬০ হাজার টাকা আদায় করতেন।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল, গাড়িচালক বিজয় দাস ও তার বোন সীমা দাসকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তারা। এদিকে পুলিশ জানায়, এই চক্রের অন্য ২ সদস্য সত্য সুন্দর দে ও সাগর এখনও পলাতক রয়েছেন।

তাদের ৫জনের বিরুদ্ধেই ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের রেজিস্ট্রেশন অফিসার পল্লবী চাকমা একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর এর তদন্তভার গ্রহণ করেছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক কামরুজ্জামান। আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড শুনানি হবে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর)।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এনআইডি জালিয়াতি চক্রের এই সদস্যরা শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য এনআইডিই বানাতো না। তারা বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র অবৈধ উপায়ে নির্বাচন কমিশনের অজ্ঞাতসারে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সংশোধন ও তৈরি করে দিতেন।

আগস্টে নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে আসা লাকি আকতার নামের এক রোহিঙ্গা নারী আটক হলে রোহিঙ্গাদের এনআইডি পাওয়ার ঘটনাটি আলোচনায় আসে। পরে ইসির পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে নামে দুদকের একাধিক টিমও।

এমনকি সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম এসে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করে বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভোটার করা বা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততা আছে এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে নির্বাচন কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’

তবে নির্বাচন কমিশনের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী এ কাজে জড়িত আছেন বলে তিনি মনে করেন না। যদিও ওই দিন রাতেই নির্বাচন কমিশনের এক কর্মচারীসহ ৩জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!