ছুঁতো পেলেই রেল কর্তারা বিদেশ ট্যুরে, এই দুমাসে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ২২ জন

ভ্রমণে রেলমন্ত্রী স্বয়ং একধাপ এগিয়ে

করোনা মহামারির মধ্যেও সুযোগ পেলেই নানা ছুঁতো দেখিয়ে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। স্বয়ং রেলমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে।

অথচ করোনাকালে কৃচ্ছতাসাধনের জন্য সরকার বিদেশ ভ্রমণখাতে বরাদ্দের ৫০ ভাগ টাকাই আটকে দিয়েছে। এর পাশাপাশি কর্মকর্তাদের রুটিন সফরগুলোও বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সুযোগ পেলেই রেলের টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে গত ২৩ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউরোপের চারটি দেশে ১৩ দিনের সফরে যান ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। এই চারটি দেশ হল— যুক্তরাজ্য, জার্মানি, স্পেন ও ফ্রান্স। এই সফরে রেলমন্ত্রী ও সচিবের স্ত্রীরা নিজস্ব খরচে তাদের ভ্রমণের সঙ্গী হন। মন্ত্রী ছাড়া এই সফরে আরও যান রেল সচিব সেলিম রেজা, অতিরিক্ত সচিব ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস, উপসচিব নাজমুল হক, বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কামরুল আহসান ও মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী, মন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও সহকারী একান্ত সচিব রাশেদ প্রধান।

সেবার রেল মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, প্রতিনিধিদল এসব দেশে উন্নত রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা দেখেন। পাশাপাশি রেলওয়েতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে।

তারও আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রী হওয়ার পরপরই ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে যান নুরুল ইসলাম সুজন।

গত ডিসেম্বর মাসেই রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, রেলের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদারসহ ৫ সদস্যের একটি টিম রাশিয়া সফরে যান। ১৮ থেকে ২৬ ডিসেম্বর নয়দিনব্যাপি রাশিয়া সফর নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে উন্নত রেলযোগাযোগ ব্যবস্থার খুঁটিনাটি দেখা ছাড়াও রেলে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে রাশিয়ায় যায় মন্ত্রীসহ প্রতিনিধিদলটি।

গত বছরের ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য রেলওয়ের তিন কর্মকর্তা ও মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ভারত সফরে যান।

এবার নতুন বছরের জানুয়ারিতেই রেলের ১০ জন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। ২৪ থেকে ৩০ জানুয়ারি ‘রোলিং স্টক অপারেশনস ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট অব বিআর’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই ‘শিক্ষা সফরে’ রয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ৫ জন কর্মকর্তা, পরিকল্পনা কমিশনের দুজন কর্মকর্তা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

এই একই প্রকল্পের অধীনে রেলওয়ের আরও ১২ কর্মকর্তা ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাসের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছেন সেই একই যুক্তরাষ্ট্রে। এরা হলেন— ডিভিশনাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট (ওয়ার্কশপ) তাপস কুমার দাস, অতিরিক্ত প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (প্রকল্প) তসলিম আহমেদ খান, ওয়ার্কস ম্যানেজার (পি) ফয়েজ আহমেদ, প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ার শাহিনুল হক অপু, উপ-পরিচালক (পিপিএন্ডসি) হুমাইরা মহিউদ্দিন, সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার কালিউল ইসলাম, সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম, সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বেনজীর আহমেদ, সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ খান, সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট আবু বকর সিদ্দিক এবং সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট মজিবুর রহমান বাবুল।

অভিযোগ উঠেছে, কর্মকর্তাদের সর্বশেষ এই বিদেশ সফরের তালিকায় বিশেষ বিশেষ কর্মকর্তাদের সুবিধা দিতে জ্যেষ্ঠতাও লঙ্ঘন করা হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!