ছিলেন ছাত্রদলের, হয়ে গেলেন ছাত্রলীগ নেতা

পতেঙ্গায় ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে ক্ষোভ

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার রাকিবুল ইসলাম সবুজ সাবেক থানা ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা হওয়ার একই থানায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। এছাড়াও এ কমিটির অধিকাংশ নেতা অছাত্র ও বিবাহিত— এমন অভিযোগ করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

এদিকে নবগঠিত ছাত্রলীগের এই কমিটিকে ‘বিএনপি-জামায়াতঘনিষ্ঠ’ ও ‘পকেট কমিটি’ বলে আখ্যায়িত করে ছাত্রলীগের ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিন নেতা। তারা হলেন, পতেঙ্গা থানার নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ-আল মামুন ও ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাঈন নেওয়াজ ও পাঠাগার সম্পাদক বিজয় পাল।

জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নবগঠিত পতেঙ্গা থানা শাখার সভাপতি ডা. নুরুল আবছারকে তার বাসায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন ছাত্রদল নেতা রাকিবুল ইসলাম সবুজ। একই সঙ্গে সাবেক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও নবগঠিত বিএনপির ইপিজেড থানার সভাপতি সরফরাজ কাদের রাসেলকেও শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন তিনি। ছাত্রদলের সক্রিয় এই কর্মী কী করে ছাত্রলীগে পদ পেলেন— এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে ক্ষোভ ও সমালোচনা।

তবে পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম সবুজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত বছর থানা বিএনপির সভাপতি ডা. নুরুল আবছারকে ক্লাবের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম। এছাড়া ইপিজেড থানার সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেল সম্পর্কে আমার মামা হন।’

জানা যায়, গত ২৭ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের পতেঙ্গা, বন্দর ও আকবর শাহ থানাসহ তিন থানায় আগামী দুই বছরের জন্য কমিটির অনুমোদন দেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। এতে হাসান হাবিব সেতুকে পতেঙ্গা থানার সভাপতি ও মেহেরাজ তৌফিককে সাধারণ সম্পাদক করে ৫৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে জানান, নবগঠিত এই কমিটির দুই সহসভাপতি পদে থাকা একজন মো. সাগরের ছাত্রত্ব নেই। অপরজন জাসেম বিবাহিত। সাগর অছাত্র, তার একটি চায়ের দোকান আছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ-আল মামুন ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘গত ২৭ ডিসেম্বর বিএনপি ও জামায়াতপন্থী (পরিবারের সন্তানদের নাম উল্লেখ করে) পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগের বড় বড় পদে রেখে ভিত্তিহীন ও পকেট কমিটি ঘোষণা দেয় মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। যারা সারাবছর বিএনপির স্লোগান দিয়েছে এখন দেখি থানা কমিটির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতেই তাদের নাম। ওইদিন নবগঠিত কমিটির অনুমোদনের ১৪ ঘণ্টা পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সহ-সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’

এদিকে দুইদিন পর পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন মো. মাঈন নেওয়াজ। তিনি বলেন, ‘আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে কমিটি ঘোষণা দিয়েছে মহানগর ছাত্রলীগ। এটি ভিত্তিহীন কমিটি। কমিটি অনুমোদনের আগে আমার সিভি নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানতাম না।’

মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন সেটা গ্রহণ করা হবে না। মহানগরকে পদত্যাগকারীদের লিখিতভাবে জানাতে হবে। তখন পদত্যাগ গ্রহণ করা হবে।’

তিনি বলেন, নবকমিটিতে যাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে সেগুলো প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ২৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটির অনুমোদন হয়। ২০১৪ সালে সম্মেলনবিহীন ২৯১ জনের একটি কমিটির অনুমোদন দেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। দীর্ঘ ৩৯ বছর পর গত ২৭ ডিসেম্বর পতেঙ্গা ও বন্দর থানা কমিটির অনুমোদন দেয় মহানগর ছাত্রলীগ।

মুআ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!