ছিনতাইকারীরাই খুন করে ডা. শাহ আলমকে, আদালতে স্বীকারোক্তি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকার গরীবের ডাক্তার খ্যাত ডা. শাহ আলম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত লেগুনা চালক ওমর ফারুককে (১৯) আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৪টায় নগরীর রেল স্টেশন এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত ওমর ফারুক চট্টগ্রাম মূখ্য হাকিম ৩য় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের উপ-পরিচালক তারেক আজিজ আরো জানান, ‘ডা. শাহ আলমের রক্তমাখা সেই লেগুনাটি উদ্ধার করা হয়েছে।’

ওমর ফারুকের বরাতে র‌্যাবের উপ-পরিচালক তারেক আজিজ জানান, ওমর ফারুক সেইফ লাইনের আল মনুসর পরিবহনের লেগুনাটির চালকের আসনে ছিল। হেল্পার ও যাত্রীর ছদ্মবেশে আগ থেকে দুইজন গাড়িতে ছিল। ডা. শাহ আলম ওঠারপর আরো দুইজন যাত্রীবেশে উঠে তাকে বলা হয় ‘যা কিছু আছে তা দিয়ে দিতে’। ডা. শাহ আলম দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রথমে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার মুখে আঘাত করে খুনিরা। গাড়িতেই ডা. শাহ আলম মারা যান। শাহ আলমের লাশ রাস্তার পাশে ঝোপের আড়ালে ফেলে দিয়ে খুনিরা গাড়ি ওমর ফারুকের বাড়ি বাড়বকুণ্ড নিয়ে যায় । বাড়ি থেকে বালতি নিয়ে সাগরপাড়ে গিয়ে গাড়ি থেকে রক্ত ধুয়ে নেয়। কিন্তু পুরোপুরি রক্তের দাগ মুছতে পারেনি তারা। খুনে ব্যবহৃত ছুরিটিও পরিস্কার করে নেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের উপ-পরিচালক (মিডিয়া) মো. মাশকুর রহমান জানান, আটককৃত ওমর ফারুক খুনে জড়িত ৫জনের নাম প্রকাশ করেছে। অতি দ্রুত আমরা তাদের আটক করবে পারবো।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টায় সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা বাইপাস থেকে ডা. শাহ আলমের ভাগনে মো. ইজাব তাকে সেফ লাইনের আল মনসুর পরিবহনের একটি লেগুনাতে তুলে দেন। ইজাব ভেবেছিলেন অন্যদিনের মতো তার মামা চান্দগাঁওয়ের বাসায় পৌঁছে গেছেন। কিন্তু বাসায় না পৌঁছায় স্ত্রী-সন্তানরা ধরে নিয়েছিলেন ডা. শাহ আলম সীতাকুণ্ডেই অবস্থান করছেন। এ সময় ডা. আলমের লাশ পড়েছিল সীতাকুণ্ড ঘাটঘর এলাকায়।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকালে স্থানীয়দের দেওয়া সংবাদে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। শুক্রবার রাতে লাশ শনাক্ত হওয়ার পর শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে স্ত্রী-সন্তানরা লাশ গ্রহণ করেন। আসর নামাজের পর নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক মসজিদে নামাজে জানাযা শেষে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

প্রসংগত, নিহত ডা. শাহ আলম সীতাকুণ্ড কুমিরা ইউনিয়নের ছোট কুমিরার মরহুম মাস্টার আজিজুল হকের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) থেকে এমবিবিএস শেষ করে চমেকের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল গনি শিকদারের মেয়ে অমরানা আজমিরি শিকদার কান্তার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কান্তা নগরীর মরহুম আবু শাহিদ দোভাসের মেয়ের ঘরের নাতনি। শাহ আলম-কান্তার সংসারে দুই পুত্রসন্তান রয়েছে। একজন বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়ছেন, অপরজন দশম শ্রেণিতে। ডা. শাহ আলম দীর্ঘ ৩০ বছর সৌদি আরবের একটি স্বনামধন্য হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি সীতাকুণ্ডে নিজ গ্রামে শিশুদের জন্য ‘চাইল্ড কেয়ার’ নামে মানসম্পন্ন একটি ক্লিনিক চালু করেন।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাত ১০টায় জানান, নিহত ডা. শাহ আলমের স্ত্রী অমরানা আজমিরি শিকদার বাদি হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!