ছাদবাগানে আগ্রহী বৃক্ষপ্রেমীদের ভিড় লালদিঘীর বৃক্ষমেলায়

আষাঢ় মাস যাই যাই করছে। শেষ সময়ে বর্ষার বৃষ্টিতে রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে সবুজে ছেয়ে গেছে লালদিঘীর মাঠ। বাতাসে ফুলের মিষ্টি গন্ধ। হেলেদুলে উঠল গাছের ডালে ঝুলে থাকা পাকা আম। শুধু কি আম? গাছের ডালে ডালে শোভা পাচ্ছে কমলা, আমলকি, করমচা, পেয়ারাসহ বারোমাসি আরও কত কী গাছ! টবের গাছে ঝুলে থাকা ডাসা ডাসা সব ফলের মুগ্ধতা কাটতে না কাটতেই আপ্লুত করে তুলবে রঙ-বেরঙের গোলাপের দল। টবে টবে রয়েছে বাহারি রকমের লতাপাতায় মনোমুগ্ধকর ফুলগাছ। মাটির বড় সানকিতেও রয়েছে ফুলের চারা। হরেক রকমের দেশি ও বিদেশি গাছের সঙ্গে সখ্য গড়তেই ভীড় করছে নগরীর লালদিঘীর বৃক্ষমেলার মাঠে।

চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে চলছে ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা।
চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে চলছে ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা।

প্রতি বছর জুন-জুলাইতে বৃক্ষমেলায় মুখর হয় লালদিঘী মাঠ। শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করা হয়। ‘শিক্ষায় বন প্রতিবেশ, আধুনিক বাংলাদেশ’—এ প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হয়েছে বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা। ১৫ দিনব্যাপী এই মেলা চলবে আগামী ২৭ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বৃক্ষপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর থাকছে মেলা প্রাঙ্গণ।

ছাদবাগানের জন্য চারা খুঁজছিলেন করিম শেখ। তিনি বলেন, ‘গাছের চারা কেনা আমার এক ধরনের শখ ও নেশা। বাড়ির ছাদে সবজি থেকে শুরু করে কয়েক ধরনের ফলের গাছ লাগিয়েছি। পেঁপে, মরিচ ও পুঁইশাক এখন কেনা লাগে না। স্বাস্থ্যসম্মত সবজি নিজ বাগান থেকেই পাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, বৃক্ষমেলায় এসেছি জাম্বুরা, কমলা, মাল্টা ও কিছু ক্যাকটাস জাতীয় কিছু গাছ কেনার জন্য।

চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে চলছে ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা।
চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে চলছে ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা।

স্কুল শিক্ষিকা নুরুন নাহার রুমী বলেন, ‘ভাড়া বাড়িতে থাকলেও বারান্দায় আমার গাছের শেষ নাই। গাছের প্রতি যে কেমন নেশা আমার তা বলে বোঝানো সম্ভব না। গাছ দেখলেই আমার কিনতে ইচ্ছে করে। গাছ পরিচর্যার জন্য কিছু যন্ত্রপাতিও কিনেছি।’

বৃক্ষমেলায় মেলায় ঘুরতে আসা চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী হাসনেহেনা বলেন, ‘বলতে গেলে প্রতি বছর এই সময়ের অপেক্ষায় থাকি। আমি মূলত মেলা থেকে গাছ কিনি উপহার দেয়ার জন্য। কাছের প্রিয় মানুষদের বিভিন্নরকম গাছের চারা উপহার দেই।’

ষাটোর্ধ মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, নিজের হাতে লাগানো গাছের ফলের যে স্বাদ তা মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না।

নগরীর দক্ষিণ খুলশী এলাকা থেকে সপরিবারে মেলায় এসেছেন মো. শাহ আলম। তিনি প্রাইভেট কারভর্তি করে চারা কিনে বাড়ি ফিরছেন। শাহ আলম বলেন, ‘ছাদে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের গাছ কিনলাম। তাছাড়া ছাদে আম, মাল্টা, লেবু, কমলা ও আনার লাগাবো।’

স্ত্রী নাজিয়া চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে বৃক্ষমেলায় এসেছেন আতিকুল কবির। নিজ বাসার ছাদেও গাছ লাগিয়েছেন বেশ। গ্রামের বাড়ির জন্যে কিছু ফলের গাছ কিনেছেন। আতিকুল কবির বলেন, ‘আমার বাসার ছাদে গাছে ভরপুর। গ্রামের বাড়ি ফেনী। সেখানে ফলের বাগান আছে। সেই বাগানের জন্য আম, লিচু, নারিকেলসহ কয়েকশ চারা কিনবো। তাই দেখতে আসা।’

ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন বলেন, ‘অনেকের কাছে নতুন মডেলের মোটরবাইক কেনা যেমন ফ্যাশন, আমার কাছে গাছ লাগানো ফ্যাশন।’

সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের শিক্ষক সানাউল্লাহ শিক্ষার্থীদের নিয়ে মেলায় এসেছেন। তিনি জানান, ‘দেশের তাপমাত্রা বাড়ছে। সামনে গাছ লাগানো ছাড়া এই দেশে বসবাস করা মুশকিল হয়ে যাবে। নিজেদের বাঁচাতে হলেও গাছ লাগাতে হবে। তাই গাছ লাগানো সবারই ফ্যাশন হওয়া উচিত। বাচ্চাদের ভেতরে এই উপলব্ধি আনার জন্যই নিয়ে আসা।’

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আয়োজিত এবারের বৃক্ষমেলায় স্টলের সংখ্যা ৫৩টি। আয়োজকরা জানান, মেলায় প্রায় দুই হাজার প্রজাতির চারা পাওয়া যাচ্ছে। এ মেলায় বনজ, ফলজ, শোভাবর্ধনকারী, বিরল, বিলুপ্তপ্রায়, বনসাইসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির চারা দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার নূর সিদ্দিকী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছাদবাগানে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ছে তাই আমাদের সবার উচিত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য গাছ লাগানো। সবার নিকট একটাই আবেদন, সবুজে বাঁচতে আসুন একটা করে চারা রোপণ করি।’

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ‘ফুলের বাইরে এবার চাহিদা বেড়েছে সবজি আর ফলের চারা। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, সচেতনতা ও শখের বসেই গাছ কেনা।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!