ছাত্র না হয়েও চবিতে কথিত ‘লোকাল’ সিণ্ডিকেটের দাপট, অপরাধে একজোট সবাই

হাটহাজারী কলেজের দুই শিক্ষার্থীরও ছাত্রত্ব বাতিল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে উলঙ্গ করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দুই দফায় আটক হন মোট পাঁচজন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে এদের মধ্যে চবির দুই ছাত্রকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে চবি প্রশাসন। এবার চবির পর ছাত্রত্ব হারালো হাটহাজারী কলেজে পড়ুয়া বাকি দুই ছাত্রও।

সোমবার (২৫ জুলাই) রাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক আতাউর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, চবি ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তার হাটহাজারী কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বহিষ্কৃত ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন— হাটহাজারী কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্র নূর হোসেন ও স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাসুদ রানা।

এর আগে সোমবার আলাপকালে হাটহাজারী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ গুল মোহাম্মদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে ওই দুই ছাত্রের ব্যাপারে তথ্য নিয়েছে আমাদের থেকে এবং আমরা এই দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।

তবে চবির ঘটনায় আটক ছাত্রদের বিষয়ে কিছু ‘মিস্ ইনফরমেশন’ প্রচার হচ্ছে বলে জানিয়ে অধ্যক্ষ গুল মোহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় আটক পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে আমার কলেজের ছাত্র বলে প্রচার করা হচ্ছে। যদিও তথ্যটি সম্পূর্ন সত্য নয়। আমাদের ছাত্র দুজন— নুর হোসেন ওরফে শাওন হচ্ছে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের এবং মো.মাসুদ রানা হচ্ছে ডিগ্রি পাস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কিন্তু অপর আসামি সাইফুলের নামে আমাদের কলেজে কোন রেকর্ড পাওয়া যায়নি। আর শাওন এবং মাসুদ রানা নিয়মিত কলেজে আসতো না। তাই কলেজের সাথে তাদের তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না।’

তবে সাইফুলকে হাটহাজারী কলেজের ছাত্র না বলে দাবি করলেও কলেজটির সাবেক ছাত্রদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাইফুল হাটহাজারী কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কলেজে যেতেন না।

জানা গেছে, হাটহাজারী কলেজের ছাত্র হলেও মুলত অভিযুক্ত তিনজনই থাকতেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। চবিতেই তাদের আড্ডা-রাজনীতিসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড। তবে একটি সূত্রে জানা যায়, শাওন ও মাসুদ রানাদের সাথে চবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেসব সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়নি তারা হাটহাজারী কলেজে ভর্তি হয়ে থাকেন। তবে শুধুমাত্র ভর্তি ও পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া তাদের সবকিছুই চলতে চবিতে। চবিতে বসবাসরত কর্মচারীদের এই সন্তানদের বাড়ি চট্টগ্রামে না হলেও তারা নিজেদের ‘লোকাল’ বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন এবং কর্মচারীদের সন্তানদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেটও তৈরি করা হয়। যার নেতৃত্বে ছিল আজিম।

মাদক বিক্রি, ছিনতাইসহ স্থানীয় রাজনীতিতে ‘ম্যানপাওয়ার’ সাপ্লাইয়ের কাজ করতো এই সিন্ডিকেট। রাজনীতিতে ভিন্ন মত ও পথের হলেও কর্মচারী সন্তানদের সিন্ডিকেট হিসেবে তারা এক। চবির ছাত্রীদের যৌন হয়রানিরও একাধিক অভিযোগ আছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ১৭ জুলাই চবির এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের পর নজরে আসে এই সিন্ডিকেটের। যার পাঁচ সদস্যকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের এতটাই দাপট যে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পান না বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররাও। এমনকি কোন শিক্ষার্থী যদি এই সিন্ডিকেট মেম্বারদের রোষানলে পড়েন, তবে তার শিক্ষাজীবন শেষ করে বের হয়ে আসাটাও রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি এই সিন্ডিকেট সদস্যদের আটকের পরও তাদের বিরুদ্ধে তথ্য দিতে ভয় পাচ্ছেন চবির আবাসিক ছাত্ররা।

ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য ২৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব হেলথ,রেসিডেন্স আ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির বিশেষ সভায় চবির ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো.আজিম ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নুরুল আবছার বাবুকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

আটককৃতদের মধ্যে মো.আজিম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের কর্মী এবং অপর চারজন চবিকেন্দ্রিক গ্রুপ ভিএক্সের (ভার্সিটি এক্সপ্রেস) নেতা বলে জানা যায়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!