ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় প্রধান শিক্ষক কারাগারে

কলেজ ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় রাঙামাটির লংগদুতে আবদুর রহিম নামে স্কুলের এক প্রধান শিক্ষককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তিনি লংগদু উপজেলার করল্যাছড়ি আরএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম স্বেচ্ছায় রাঙামাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেলাল হোসেনের আমলী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ।

এর আগে রোববার (৪ অক্টোবর) রাতে ধর্ষণের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমকে আসামি করে লংগদু থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে পুলিশি নিরাপত্তায় ওই ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে।

তবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গত ২৫ সেপ্টেম্বর। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রাণনাশের হুমকি ও স্থানীয়ভাবে বিচারের আশায় দেরিতে বিষয়টি থানা পুলিশে গড়ায়।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুলের পাশে ছাগল খুঁজতে গেলে লেবু দেওয়ার কথা বলে ছাত্রাবাসের একটি নির্জন কক্ষে ডেকে নিয়ে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করেন করল্যাছড়ি আরএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম। বিষয়টি কাউকে না জানাতে প্রাণনাশেরও হুমিক দেওয়া হয়।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে ওই ছাত্রীর শারীরিক অসুস্থতা ও অস্বাভাবিক আচরণে সন্দেহ হলে মায়ের জেরাতে ঘটনার দুইদিন পর ২৭ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের বিষয়টি জানান। ওইদিনই বিষয়টি স্থানীয় গ্রাম প্রধান (কার্বারি) ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানানোর পরও কোন সুরাহা হয়নি। এরপর ১ অক্টোবর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আটরকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ছাত্রীর মা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। অনেকটা নিরুপায় হয়েই তিনি ৪ অক্টোবর রাতে থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আটরকছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা বলেন, ব্যস্ততার কারণে এবিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসতে পারিনি। এখন মামলা হয়েছে।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে দশটার দিকে তার মেয়ে ছাগল খুঁজতে বিদ্যালয়ের দিকে যায়। এ সময় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম লেবু দেওয়ার কথা বলে বিদ্যালয়ের পেছনে ছাত্রাবাসের একটি নির্জন কক্ষে ডেকে নেন। সেখানে কক্ষের দরজা বন্ধ করে জোরপূর্বক মেয়েকে ধর্ষণ করেন। এরপর বিষয়টি গোপন না করলে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

তিনি আরও জানান, গত বছর করল্যাছড়ি আরএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে মেয়ে রাঙামাটি সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। তিনি নিজেও ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য।

তবে ধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেন অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুর রহিম। তিনি শিক্ষকতা ছাড়াও দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার লংগদু উপজেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। চার সন্তানের জনক আব্দুর রহিমের ‘প্রেমঘটিত বিয়ে’র দুই স্ত্রীর মধ্যে প্রথম স্ত্রী তার মাদরাসারই ছাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে।

লংগদু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ মোহাম্মদ নূর বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রীর মা বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!