ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল পটিয়ায়

ইউনিয়নে নতুন কমিটি গঠন করতেও চাঁদা চান

চট্টগ্রামের এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনে পদ দেওয়ার বিনিময়ে উঠেছে চাঁদা দাবির নালিশও। এই নেতা হলেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নাজমুল সাকের সিদ্দিকী। পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও স্কুল-কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করতে ইউনিয়নভিত্তিক চাঁদা দাবি করছেন নাজমুল সাকের সিদ্দিকী— এমন অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতা।

এর আগে পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের এই আহ্বায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার শিকার ওই নারী গত ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সেক্রেটারি বরাবর এই অভিযোগ দিয়েছেন। তাতে কোনো সাড়া না পেয়ে পরে তিনি ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছেন নাজমুল সাকের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত দুই বছর ধরে নাজমুল সাকের সিদ্দিকীর সঙ্গে ওই নারীর সম্পর্ক। এর সুবাদে নাজমুল বিভিন্ন সময় ওই নারীর মোবাইলে ফোন দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করেন। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করেন।

এরপর বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে ওই নারীর কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ নগদ টাকা ধারও নিয়েছেন। সবশেষ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান করে দেওয়ার বিনিময় হিসেবেও নেন নগদ ১ লাখ টাকা।

ওই নারী অভিযোগ করেন, কমিটিতে আসার পরেও বিভিন্ন প্রোগ্রামের কথা বলে নাজমুল টাকা নিতেন। একপর্যায়ে তাকে আর টাকা দিতে অপারগতা জানালে নাজমুলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

পরবর্তীতে ওই নারী যোগাযোগ করতে চাইলেও নাজমুল বিভিন্ন অজুহাতে তাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন। এর এক পর্যায়ে ওই নারী গোপনে খবর নিয়ে পটিয়া কলেজ গেইটের সামনে তার সাথে দেখা করতে গেলে প্রকাশ্যে নাজমুল তাকে অশালীন ভাষায় গালাগালি করেন। এরপর স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে নাজমুল দৌড়ে পটিয়া ছবুর রোড দিয়ে পালিয়ে যান।

ওই নারী বলেন, ‘নাজমুল সাকের সিদ্দিকীর বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। যার কারণে আমি সর্বপ্রথম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারিকে অভিযোগ দিয়েছি। পরে আমি আইনের আশ্রয় নিই।’

ধর্ষণ ও প্রতারণার বিষয়ে জানার জন্য পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক নাজমুল শাকের সিদ্দিকীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগ বরাবর আমার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ দিয়েছে এক মহিলা— সেটা আমাকে সভাপতি বলেছে। কিন্তু মহিলাটিকে আমি চিনি না। বিষয়টি শোনার পর আমি পটিয়া থানায় একটা অভিযোগ করেছি।’

শাকের আরও বলেন, ‘আমি যেহেতু উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়কের দায়িত্বে আছি। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতবিরোধ ও গ্রুপিং আছে। স্বাভাবিকভাবে সেটা আমার সাথে থাকবেই। হয়তো সেটা আমার কমিটি করাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে সেটা থানায় না দিয়ে জেলা ছাত্রলীগকে দেবে কেন? মহিলাটিকে আমি থানার ওসি সাহেবকে দিয়ে অনেকবার ফোন করিয়েছি, তিনি আসবে বলে-আসবেন বলে আর আসেননি।’

এ বিষয়ে জানার জন্য দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বরাবর এক ভুক্তভোগী মহিলা ধর্ষণ ও বিভিন্ন প্রতারণামূলক কাজের একটি অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তার কাছ থেকে তথ্য প্রমাণ চেয়েছি। কিন্তু তিনি তা এখনো দেননি। যার কারণে নাজমুল শাকের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!