ছাত্রলীগ নেতাকে মারতে শিবির ক্যাডার ‘ভাড়া’ করলেন চেয়ারম্যান

চারটি বন্দুক, দুই ধারালো অস্ত্র নিয়ে তারা এসেছিল সজীবের বাড়িতে। সজীব বাড়িতে আছে কিনা তা দেখতে এসেছিল দুই জন। অস্ত্রগুলো তখন রাখা হয়েছিল তার বাড়ির পাশের একটি ঝোপে। কিন্তু স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে যায় এই দুই জন৷ পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী উদ্ধার করা হয় ওই ছয়টি ধারালো রামদা। আটক দুই জনের ঠাঁই হয় সাতকানিয়া থানার হাজতে।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সজীবের উপর হামলা করতে জামায়াতের এই ক্যাডারদের পাঠান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার উপর হামলা করতে এসে এলাকাবাসীর হাতে আটক হয়েছে দুই জামায়াতে ক্যাডার। মঙ্গলবার (২ জুন) এ ঘটনা ঘটে। পরে তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

এরা হলেন সাতকানিয়ার গাটিয়াডেঙ্গা গ্রামের হাবিবুর রহমান ও ছদাহা ইউনিয়ন আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার তরিকুল ইসলাম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জের ধরে বাজালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দীন সজীবের উপর হামলা চালাতে আসে হাবিবুর রহমান, তরিকুল ইসলামসহ আরও ৪-৫ জন সন্ত্রাসী। তারা বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্তের অনুসারী।

এ সময় স্থানীয়রা হাবিবুর রহমান ও তরিকুল ইসলামকে হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের গ্রেফতার করে। এ দুই জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে।

গিয়াস উদ্দিন সজীব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, তাপস চেয়ারম্যানের অন্যায় কাজের প্রশ্রয় না দেওয়ার তার সঙ্গের সজীবের বিরোধ হয়। তাপস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সম্পদের পাহাড় গড়েন। ২ জুন তাপসের নির্দেশে জামায়াতের ক্যাডাররা হামলা চালাতে আসে সজীবের উপর।

৪ নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা আহম্মদ কবির চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, তাপস চেয়ারম্যান এ পরিকল্পনার সাথে জড়িত। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা প্রশান্ত চৌধুরী যিশুর বাড়িতেও তাপস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আটককৃতরা হামলা করেছিল।

জানা গেছে, সজীবের উপর হামলার আগে তারা সজীবের বাড়ি রেকি করতে যায়। এ সময় চারটি বন্দুক, দুইটি ধারালো অস্ত্র সজীবের বাড়ির পাশে দিয়ারকুল নামে একটা জায়গায় সংরক্ষণ করে তারা। এ বিষয়টি ভিডিওতে স্বীকার করেন হাবিবুর রহমান এবং তরিকুল ইসলাম।

আটক হওয়া হাবিবুর ও তরিকুলকে আটকের পর অস্ত্রগুলোর ব্যাপারে স্থানীয়রা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিওতে তাদের বলতে দেখা গেছে, এলাকাবাসী যদি তাদের উপর হামলা চালায় তাহলে তারাও এলাকাবাসীর উপর হামলা চালাতে এই অস্ত্রগুলো মজুদ করেছে।

এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, সজীবের উপর হামলার পরিকল্পনায় ছিল জামায়াত নেতার শাহজাহান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বাজালিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রফিক আহম্মদ চৌধুরীর ছেলে রাসেদ আলম চৌধুরী এবং মাসুদ চৌধুরী।

জামায়াতের সাবেক সাংসদ শাহাজাহান চৌধুরীর সঙ্গে শিবিরের মাসুদ (লাল বৃত্ত দেয়া)
জামায়াতের সাবেক সাংসদ শাহাজাহান চৌধুরীর সঙ্গে শিবিরের মাসুদ (লাল বৃত্ত দেয়া)

স্থানীয়দের অভিযোগ, আটককৃতরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে কৌশলে রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করে বর্তমানে তাপস চেয়ারম্যানের আশ্রয়ে শুরু করেছে অপকর্ম। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্বের নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপরই চালাচ্ছে হামলা, করছে নির্যাতন।

সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা হাবিবুর রহমান এবং তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছি। ওরা গিয়েছিল কোন দুর্ঘটনা ঘটানোর জন্য। ওরা এখন চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। তবে কি জন্য গিয়েছিল সেটা জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আমরা জানতে পারব।’

বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, এ পরিকল্পনায় তাপস চেয়ারম্যান জড়িত।

বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সজীবকে হত্যা করতেই তাদের পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনার সাথে তাপস চেয়ারম্যান জড়িত।

এদিকে গত ৩০ মে রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা প্রশান্ত চৌধুরী যীশুর বাজালিয়া ইউনিয়নের বাড়িতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনা তাপস চেয়ারম্যানকে জানানোর পর তিনি জানিয়েছিলে, এ ঘটনায় তার কিছু করার নেই। তিনি যুবলীগ নেতা যীশুর পরিবারকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যদি এসব ঘটনায় আমার হাত আছে এ রকম প্রমাণ কেউ দিতে পারে তাহলে আমি চেয়ারম্যান এবং দলীয় পদ ছেড়ে দিব।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!