ছাত্রলীগের ৭ নেতাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় বহিষ্কার

সাতজনের ৬ জনই আগে থেকে ‘দাগী’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে চার শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে নির্যাতনের ঘটনার পাঁচ সপ্তাহ পর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ছাত্রলীগের সাত নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এই সাতজনের মধ্যে ছয়জনই এর আগে নানা অপকর্মের কারণে শাস্তি পেয়েছিলেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) প্রধান ছাত্রাবাসের ১৭-সি কক্ষে নির্যাতনের শিকার হন চার ছাত্র।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) প্রধান ছাত্রাবাসের ১৭-সি কক্ষে নির্যাতনের শিকার হন চার ছাত্র।

১৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বহিষ্কারের ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শাস্তি পাওয়া সাতজনই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর ‘অনুসারী’ হিসেবে পরিচিত।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) প্রধান ছাত্রাবাসের ১৭-সি কক্ষে নির্যাতনের শিকার হন চার ছাত্র। এরা হলেন— সাকিব হোসেন, জাহিদ হোসেন, আবু রাইয়াত ও মোবাশ্বির হোসেন। ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে প্রধান ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে নিয়ে তাদের নির্মমভাবে পেটান ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এদের মধ্যে সাকিব হোসেন ও জাহিদ হোসেনকে ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিকেলের আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। নির্যাতনের শিকার ছাত্রদের প্রত্যেকেই এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের ছাত্র।

১৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্তে জানানো হয়, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, গোয়েন্দা তথ্য যাচাই ও অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পরিলক্ষিত হচ্ছে কিছু শিক্ষার্থীর যথেচ্ছাচারী আচরণের কারণে কলেজের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসসমূহে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ ও ৩০ অক্টোবর ২০২১ ছাত্রাবাস ও ক্যাম্পাস এলাকায় ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে।’

এতে জানানো হয়, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকায় সংঘটিত সংঘাতের কারণে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ জন ছাত্ররাজনীতির নাম ভাঙিয়ে একক কর্তৃত্ব, গোষ্ঠীগত আধিপত্য ও ব্যক্তিগত হিরোইজম প্রদর্শনের জন্য ৮ ফেব্রুয়ারির নিন্দনীয় ঘটনা ঘটায়।’

সভায় নিশ্চিত করা হয়, এই ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতরা হচ্ছেন— এমবিবিএস ৫৯ ব্যাচের ছাত্র অভিজিৎ দাশ, ৫৯ ব্যাচের রিয়াজুল ইসলাম জয়, ৬২ ব্যাচের সাজু দাশ, সৌরভ দেব নাথ, মাহিন আহমেদ, জাকির হোসেন সায়েল এবং ইব্রাহিম খলিল সাকিব।

সভার সিদ্ধান্তে অভিজিৎ দাশকে এমবিবিএস ৫৯ ব্যাচের উল্লেখ করা হলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি ৬০তম ব্যাচের ছাত্র।

বহিষ্কৃত সবার বিরুদ্ধেই ছাত্রাবাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ, অবৈধভাবে রুম দখল, আগে দেওয়া মুচলেকার অঙ্গীকার ভঙ্গসহ কলেজে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট, মারধর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে, এর মধ্যে অভিজিৎ দাশকে তিন বছরের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে রিয়াজুল ইসলাম জয়, সাজু দাশ ও সৌরভ দেব নাথকে। অন্যদিকে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে মাহিন আহমেদ, জাকির হোসেন সায়েল ও ইব্রাহিম খলিল সাকিবকে। এদের মধ্যে ইব্রাহিম খলিল সাকিব ছাড়া বাকি ছয়জনই এর আগে নানা অপকর্মের কারণে শাস্তি পেয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার বলেন, ‘কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটা অ্যালার্মিং। এখন যারা শাস্তি পেলো, তারা আগেও পেয়েছিল। শাস্তি পরে কিছুটা মওকুফ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা শোধরায়নি। তাই আগের শাস্তিসহ মিলে এবার ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত বহিষ্কার করা হলো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!