ছাত্রদলের ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটিতে স্থান নেই চট্টগ্রামের কারও

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সম্মেলনের দুই মাস পর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত এ কমিটিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলার কোনও নেতা স্থান পায়নি।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ১১টায় ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি বাকি ৫৮ জন কেন্দ্রীয় সংসদের সম্মেলনে নির্বাচিত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

ঘোষিত কমিটিতে ১৫ জন করে সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। একজন সাংগঠনিক সম্পাদক, ১১ জন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একজন সহ-দপ্তর সম্পাদকের নাম রয়েছে।

তবে ৬০ সদস্যের আংশিক এই কমিটিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলার কোনও নেতা স্থান পায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করার সুবাদে বান্দরবানের সন্তান আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া পেয়েছেন সহ সাধারণ সম্পাদকের পদ, রাঙামাটি জেলা সভাপতি ফারুক আহমেদ সাব্বিরকে করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।

২০১৩ সালে গাজী সিরাজউল্লাহ ও বেলায়েত হোসেন বুলুকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের চট্টগ্রাম নগর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক জালাল উদ্দিন সোহেল সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। বাকি ১০ জনের একজন সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন ছাড়া কেউ নেই ছাত্রদলে। কেউ বিএনপি, কেউ যুবদল, কেউ স্বেচ্ছাসেবক দলের নগরের নেতৃত্বে আছেন। যে জসিম ছাত্রদলে আছেন তিনি এসএসসি পাস করেছেন ১৯৯৪ সালে! অন্য দশজনের মতো তিনিও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘরসংসার করছেন।
ছাত্রদলের ২০১৯ এর কেন্দ্রীয় সম্মেলনে বিবাহিত ও ২০০০ সালের আগের এসএসসি পাশ কাউকে নির্বাচিত করা হয়নি বলে বার বার দাবি করা হয়েছে। এ কারণে এখনো চট্টগ্রামের নেতাদের কারও স্থান হয়নি কেন্দ্রীয় কমিটিতে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শহীদুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েলের এসএসসি ২০০০ সালের পর হলেও দু’জনই বিবাহিত। তেমনি উত্তর জেলা ছাত্রদলের জুয়েল-জনিও বিবাহিত। আর নগর ছাত্রদলের নেতারা ২০০০ সালের আগে এসএসসি পাস করা এবং সবাই একাধিক সন্তানের পিতাও।

নগর ছাত্রদলের এক কর্মী দাবী করেছেন মূলত তৎকালীন নগর বিএনপির সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের দ্বন্দ্বে তখন ছাত্রদলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি। যার কারণে ছন্নছাড়া নগর ছাত্রদল এবং এখনো নেতৃত্বশূন্য।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টা আসলে দ্বন্দ্বের না। আমরাও চেয়েছিলাম ছাত্রদলকে গোছাতে। কিন্তু গাজী-বুলু তা করতে পারেনি। কমিটি করার জন্য আমি বেশ তাগাদা দিয়েছিলাম। শেষতক গাজী আর বুলুকে বাসায় ডেকে বললাম- তোমরা না পারলে আমাকে স্বাক্ষর করে দাও, কমিটি আমি করি। তখন গাজী রাজি হলেও বুলু রাজি হয়নি। তাই অগ্রসর হতে পারিনি।

এ বিষয়ে বেলায়েত হোসেন বুলু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ডা. শাহাদাত ভাই নিজ দায়িত্বে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন। এটা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি হওয়ায় আমি রাজি হইনি। তবে ২০১৩ সালে গাজী আর আমাকে যখন দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন তিন মাসের মাথায় আমাদের আগের কমিটির নেতা, থানা কমিটি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ নেতার সমন্বয়ে প্রস্তাবিত একটা খসড়া কমিটি শাহাদাত ভাইয়ের কাছে জমা দিয়েছিলাম। তখন বলা হয়েছিল গাজীর কোন অনুসারী নেই, ওই কমিটি অনুমোদন পেলে গাজী রাজনীতিতে টিকতে পারবে না। ছাত্রদলের পরিবর্তে গাজী সিরাজের অনুসারী নেতা-কর্মী তৈরি করতে লেগেছে বাকি সময়। ছাত্রদল আর কমিটি পায়নি। আমরা নেতাকর্মীদের পদ-পদবির পরিচয়ে পরিচিত করতে পারিনি। একটা শুধু আমার ব্যর্থতা নয়, আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বুলু আরও বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের দায়িত্ব পাওয়ার তিন মাসের মাথায় নগর সভাপতি এইচএম রাশেদ খানের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিতে পেরেছি। ছাত্রদলেও যদি ছাত্রদলকে নিজ গতিতে চলতে দেওয়া হতো আজকের এই পরিণতি হতো না। ছাত্রদল গোছানো থাকতো। এখনতো আমি নেই, ছাত্রদলের কমিটি করে সংগঠনটিকে গতিশীল করা হোক।

দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শহিদুল আলম বলেন, দুটি বিষয় বিবেচনায় এবার ছাত্রদল পুনর্গঠন হচ্ছে। প্রথমত এসএসসি ২০০০ সাল, দ্বিতীয়ত অবিবাহিত। আমার এসএসসি ২০০২ সাল এবং এখনো এলএলবি পড়ছি। সামনে আমার পরীক্ষা। তবে অবিবাহিত নই। যে কারণে সংগঠন আমাকে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। ছাত্রদল গঠণতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠিত হোক। আমার কোনও ক্ষোভ নেই।

এফএম/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!