ছাত্রকে ডেকে ব্যথাহীন মৃত্যু চেয়েই ঢলে পড়লেন ডাক্তার এহসান

নিজ ছাত্র ডা. নুর উদ্দিনের হাতেই ছিল ডা. এহসানের হাত। ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ স্ক্রিন জানান দিচ্ছিল এহসানের প্রাণপ্রদীপের শেষ সিগন্যাল। নিভে যাওয়ার আগ-মুহুর্তেও ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। ছাত্রকে বলেছেন, পাশে থাকতে। যেন তার যন্ত্রণাহীন মৃত্যু নিশ্চিত হয়। এই কথা বলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন চট্টগ্রামের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এহসানুল করিম।

আর এই দৃশ্যের স্মৃতি সারাজীবন যন্ত্রণা হিসেবেই বয়ে বেড়াতে হবে ডা. এহসানের ছাত্র চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নুর উদ্দীনকে। কারণ শেষ নিশ্বাস ত্যাগের মুহুর্তে নিজ শিক্ষক ডা. এহসানের হাতে হাত ছিল ডা. নুর উদ্দিনের।

প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যু শোকে কাতর হয়ে ফেসবুকে ডা. নুর উদ্দিন লিখেন, ‘নুর উদ্দীন প্লিজ আমার পাশ থেকে সরবেন না। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার শেষ চাওয়া আপনি পাশে থেকে থেকে আমার পেইনলেস ডেথ এনশিউর করেন। প্লিজ আমি পেইনলেস ডেথ চাই।’

তিনি লিখেন, ‘ঢলে পড়ার আগে আমার হাত ধরে স্যারের শেষ কথা, আমার যেন আর কষ্ট না হয়, প্লিজ।’

স্যারের প্রতি আবেগের বহিঃপ্রকাশ থেকে ডা. নুর উদ্দিন আরও লিখেন, ‘স্যার সারা জীবন নিঃস্বার্থ ভাবে দিয়ে গেলেন, যাওয়ার বেলায় কেন এত বড় স্বার্থপর হয়ে গেলেন। আমাকে সারা জীবনের জন্য এত বড় মেন্টাল ট্রমা দিয়ে নিজের শেষ চাওয়াটা পূরণ করলেন।’

এ বিষয়ে ডা. নুর উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, বুধবার (৩ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় স্যারকে দেখতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে যাই। স্যার আমার হাত ধরে বললেন, ‘নুর উদ্দীন প্লিজ আমার পাশ থেকে সরবেন না। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার শেষ চাওয়া আপনি পাশে থেকে থেকে আমার পেইনলেস ডেথ এনশিওর করেন। প্লিজ আমি পেইনলেস ডেথ চাই। আমার যেন আর কষ্ট না হয় প্লিজ’।

ডা. নুর উদ্দীন আরো জানান, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এহসানুল করিম করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর শরীরে ব্লাড ক্যানসারের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু করোনা পজিটিভ হওয়ায় ক্যানসারের পরীক্ষা-নীরিক্ষা পিছিয়ে যায়। করোনা থেকে সেরে উঠলে ক্যানসারের পরীক্ষাগুলো করানো কথা ছিল। কিন্তু করোনার ভয়াল থাবায় তার আগেই নিভে গেল এই চিকিৎসকের প্রাণপ্রদীপ।

এর আগে বুধবার (৩ জুন) দুপুর ১টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন অবস্থান ডা. এহসানুল করিমের (৪২) মৃত্যু হয়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এহসান চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকার বেসরকারি মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। তার করোনা পজিটিভ ছিল।

এফএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!