ছবি তুলতেই মোবাইল কেড়ে চড়থাপ্পড় ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তার

ভেজালবিরোধী অভিযানের ছবি তুলতে গিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের মারধরের শিকার হলেন রাজীব নামের এক যুবক। এ সময় ওই যুবকের মোবাইল কেড়ে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি। পরে পুলিশ মোবাইলের সব ছবি মুছে মোবাইলটি ফেরত দিয়েছে। অভিযানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানের এমন আচরণ দেখে হতবাক হয়েছেন উপস্থিত লোকজন। বিষয়টিকে সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে ‘রাব্বী ফুড প্রোডাক্টস’ অভিযান পরিচালনা করছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযান চলাকালে লোকজনের ভিড় দেখে স্পটে এগিয়ে যান রাজীব রায় চৌধুরী নামের এক যুবক। জনবান্ধব এ অভিযানে উৎসুক মানুষের ভীড় এবং ‘রাব্বী ফুড’ এর ভেজাল খাদ্য সামগ্রীর বিক্রির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে জনসচেতনার লক্ষ্যে ছবি তুলতেই চড়থাপ্পড় মারতে থাকেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। পরে রাজীবের হাতে থাকা মোবাইলটি কেড়ে নিয়ে পুলিশের কাছে দেন তিনি। পুলিশ যুবকের মোবাইলে থাকা সব ছবি ও তথ্য মুছে সেটি ফেরত দেন। এ সময় তার এই মারমুখী আচরণ দেখে উপস্থিত লোকজন হতবাক হয়ে যায়। মারধরের শিকার যুবক রাজীব রায় চৌধুরী স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে রাজীব রায় চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে ‘রাব্বী ফুড প্রোডাক্টস’ এর সামনে লোকজনের ভীড় দেখে আমি এগিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে দেখে আমি জনসচেতনতার লক্ষ্যে ছবি তুলছিলাম। কিন্তু বিষয়টি না বুঝেই আমাকে অভিযান পরিচালনা দলের হাসানুজ্জামান নামের এক লোক চড়থাপ্পড় মারতে থাকেন এবং আমার হাতের অপ্পো এফ-৯ মডেলের মোবাইলটি কেড়ে নেন। পরে ওই দোকানের জরিমানার একটি কাগজে আমাকে সাক্ষী বানিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর ও আমার মোবাইল নম্বর লিখে নেন।

রাজীব রায় চৌধুরী জানান, প্রশাসনের এসব অভিযানের সময় তারা নিজেদের উদ্যোগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ দিয়ে কিংবা ছবিসহ পোস্ট করে প্রচার করার অনেক নজির রয়েছে। এতে জনসচেনতা বাড়ে এবং ভেজাল খাদ্যপণ্য পরিহার করেন অনেকে। এসব কাজে আমাদের যুবসমাজকে উৎসাহিত করার পুরস্কার বদলে জনসমক্ষে আমাকে তিনি চড়থাপ্পড় মারলেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, অভিযানের সময় একজন ছবি তোলার সময় তার মোবাইল কেড়ে নিয়েছি। তবে কোন ধরনের চড় থাপ্পড় মারা হয়নি। তিনি বলেন, অভিযানের ছবি তোলার সময় সাংবাদিকরাও অনুমতি নিয়ে ছবি তুলেন। সেখানে সাধারণ মানুষ যদি অনুমতি ছাড়া ছবি তোলেন, তাহলে তাকে তো সার্চ করতে পারি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ডেপুটি গর্ভনর আমিনুল হক বাবু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, জনগনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষায় এ ধরনের অভিযান কোন লুকায়িত বিষয় না। এসব অভিযানের খবর জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করা উচিত। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তারা নিশ্চয়ই জনগণের বন্ধু। অভিযান পরিচালনার সময় জনগণের বন্ধু হিসেবে যদি কারোর মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়— এটি সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এ ধরনের ঘটনা নিন্দাজনক।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, অভিযানের সময় যদি কেউ কোন দুরভিসন্ধি ছাড়া জনস্বার্থে ছবি তুলেন, তাতে বাধা দেওয়ার কথা নয়। আর যদি কেউ অপরাধ কাজে ব্যবহারের জন্য ছবি তোলেন, তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করতে পারতেন। তবে এটি না করে কারও গায়ে হাত তুলতে পারেন না কেউ।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারী) বিকেল তিনটার দিকে ভেজালবিরোধী এ অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের বিভাগীয় সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার এবং জেলার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির অভিযোগে রাব্বী বেকারিকে (রাব্বী ফুড প্রোডাক্টস) ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জানা যায়, রাব্বী ফুড প্রোডাক্টসে আম্মান ফুড ব্র্যান্ডের নামে দীর্ঘদিন ধরে নকল চেরি দিয়ে কেক ও বিস্কুট তৈরি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কেক, পানীয়, মিষ্টি, দই, বিস্কুট বিক্রি করছিল।

সিএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!