চড়া দামে বাটার জুতা কিনে প্রতারিত ক্রেতা, সপ্তাহ না যেতেই করুণ দশা

একসময়ের অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাটার জুতা নিয়ে প্রায়ই মিলছে ক্রেতাদের অভিযোগ। শোরুম থেকে তো বটেই, এমনকি বাটার অফিসিয়াল ওয়েব্সাইট থেকেও চড়া দামে নিম্নমানের জুতা কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা— সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই উঠছে এ ধরনের অভিযোগ। ক্রেতাদের আস্থাকে পুঁজি করে নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে তৈরি জুতা বাজারে ছাড়া হচ্ছে— বাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এমনও।

জুতা তৈরির বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাটা বাংলাদেশে মানুষের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করে আসছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রেতারা শোরুম কিংবা বাটার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে চড়া দামে জুতা কিনে প্রতারিত হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ উঠছে প্রায়ই। অনেক ক্রেতারই অভিযোগ, কেনার পর ব্যবহারের সপ্তাহ না যেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে চকচকে জুতা।

জানা গেছে, বাটা কোম্পানি নিজেদের কারখানা ছাড়াও চীন থেকে আমদানি করা নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে লোভনীয় ডিজাইনের জুতা তৈরি করে বাজারে ছাড়ছে। সেইসব জুতার মান নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে অসন্তুষ্টির শেষ নেই।

শুধু তাই নয়, জানা গেছে— বাটার জুতা প্রস্তুতে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকারক উপাদান থ্যালেটর, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তারা আসল চামড়া ব্যবহারের কথা বলে ব্যবহার করছে রেক্সিনের তৈরি এক ধরনের চামড়া। আর যেখানে উন্নতমানের আউটসোল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় পিপিআর বা থার্মোপ্লাস্টিক রাবার, সেখানে বাটা কোম্পানির ব্যবহার করছে টিবিসির তৈরি আউটসোল— যা সহজেই নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়া বাটা কোম্পানি নিজস্ব কারখানায় জুতা প্রস্তুত না করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় খরচ কমাতে ৭০ শতাংশ জুতাই বাইরের বিভিন্ন কারখানায় তৈরি করে নিজেদের নামে বাজারে ছাড়ছে।

ভুক্তভোগী আবির রহমান দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি বাটা ব্রান্ডের নিয়মিত একজন কাস্টমার। কিছুদিন আগে আউটার রিং রোডে বাটা শোরুম থেকে বিজয়ের অফারে ৫০% ডিসকাউন্টে ১৩০০ টাকা দামে একজোড়া জুতা কিনি। কিন্তু নেওয়ার একসপ্তাহ না যেতেই চামড়া ফেটে সেটা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘পরে রিং রোডের বাটা শোরুমে অভিযোগ করলে তারা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আমাকে জানাবে বলে আশ্বস্ক করে। কিন্তু এরপরও এ বিষয়ে কোনো সাড়া না পেলে আমি আবার তাদের শোরুমে যাওয়ার পর আমাকে জানানো হয় ডিসকাউন্টের প্রোডাক্ট রিটার্ন বা রিপ্লেস হয় না। কাস্টমার কেয়ারের একটা নাম্বার দিয়ে সেটাতে যোগাযোগ করতে বলেন। আমাদের কষ্টের টাকা নিয়ে তারা এইভাবে প্রতারণা করছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।’

একই অভিযোগে আরেক ভুক্তভোগী নয়ন দাস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত ৫ ডিসেম্বর বাটার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বিজয়ের মাসে ৫০% ছাড়ে ২০০০ টাকায় জুতা অর্ডার করি। অর্ডারের ১০ দিন পর জুতাগুলো হাতে পাই। এরপর ১৬ ডিসেম্বর জুতাগুলো ব্যবহার শুরু করার দুই ঘন্টার মধ্যে জুতার আউটসোল উঠে যায়। পরে দেখি ওপরের চামড়াগুলোও উঠে যাচ্ছে। জুতাগুলো পরার মতো কোনো অবস্থা নেই।’

তিনি বলেন, ‘পরে তাদের অফিসিয়াল কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। বাটার মতো একটি ব্রান্ডের জুতা নিয়ে যদি আমরা এই রকম প্রতারিত হতে হয় তাহলে কাদের বিশ্বাস করব?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাটার মতো একটি ব্রান্ডের পক্ষে ক্রেতাদের সাথে এই ধরনের প্রতারণা করার কোনো সুযোগ নেই। যদি এমন হয়ে থাকে ক্রেতারা আমাদের কাছে অভিযোগ করলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফেনীর ট্রাংক রোডে বাটা শো রুম থেকে এক ক্রেতা ২৩৯৯ টাকা দিয়ে এক জোড়া জুতা কেনার এক মাসের মধ্যে জুতার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়। পরে তিনি জুতাটি পরিবর্তন করার জন্য দোকানে নিয়ে যান। কিন্তু বিক্রেতারা তাতে সম্মত হননি। অথচ ক্যাশ মেমোতে লেখা ছিল ৩০ দিনের মধ্যে পণ্যের কোনো সমস্যা হলে পরিবর্তন বা মেরামত করে দেয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করা হলে ওই শোরুমকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এর আগে ঢাকায় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ না করায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ওই অভিযোগ করায় পুরস্কার হিসেবে আসিফ আহমেদ নামের এক ক্রেতাও পান ২৫ হাজার টাকা।

এর কাছাকাছি সময়ে দুই হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে বাটার এক জোড়া জুতা কেনার পরের দিনই তা ছিঁড়ে যাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন নুজহাতুল হাসান নামের এক ক্রেতা। এ অভিযোগে বাটার বিক্রয় কেন্দ্রকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!