চুয়েট শিক্ষার্থীরা চমক দেখালো জাতীয় স্টেম প্রতিযোগিতায়

বাংলাদেশ স্টেম ফাউন্ডেশন আয়োজিত জাতীয় স্টেম প্রতিযোগিতায় চমক দেখালেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত— এই চারের সমন্বয়ে STEM প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেপার সাবমিটের আহবান করা হয়। সেখানে মোট ২৩৮টি পেপার জমা পড়ে। এর মধ্যে সেরা ৩৩টি বেস্ট পেপারকে পরবর্তী রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।

সেরা ৩৩টি পেপারের মধ্যে চুয়েটেরই রয়েছে সাতটি। চুয়েটের যে সাতটি দলের পেপার নির্বাচিত হয়েছে সেগুলো হলো— সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের টিম লাইলাক ও আরকেইক, ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের টিম ভলট্রন, চেকমেট১৯ ও ক্যালসিফ্লাউয়ার। এছাড়া রয়েছে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের টিম লোটাস, পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের টিম বিটুমিনাস।

এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত) শিক্ষার প্রসার, আত্নবিশ্বাস, সৃজনশীলতার বিকাশ এবং টিম ওয়ার্কের গুণাবলির বিকাশ। শিক্ষার্থীদের ব্যাবহারিক শিক্ষার প্রসার ও উদ্ভুত নানা সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত একাডেমিক শিক্ষাকে স্টেম শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত করার লক্ষ্যে গত বছর bdSTEM গঠিত হয়েছিল।

এ বছরের এই প্রতিযোগিতার থিম ‘টেকসই ‘উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০’-এর সাথে সম্পর্কিত করে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কাছে বাংলাদেশের ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০’ বাস্তবায়নের পথে উদ্ভূত নানা সমস্যার সমাধানের উপযুক্ত পথ খোঁজা।

প্রতিযোগিতাটি দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডার গ্রাজুয়েট ও মাস্টার্স লেভেলের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। গত ৫ জুলাই প্রতিযোগিতার উদ্বোধনের পর ৩১ জুলাই এর মধ্যে কনসেপ্ট পেপার সাবমিশন ও রেজিস্ট্রেশন সময়সীমা নির্ধারিত হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গত ২০ আগস্ট। এতে সেরা ৩৩টি কনসেপ্ট পেপার নির্বাচিত করা হয় ফাইনাল রাউন্ডের জন্য। কনসেপ্ট পেপারের প্রকল্পগুলোর মডেলিং ও গবেষণার প্রয়োজনে প্রতিটি টিমকে ১৫ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে বাংলাদেশ স্টেম সোসাইটির পক্ষ থেকে।

চুয়েটের টিম আরকেইক দলের সদস্যরা হলেন— সাদিয়া আফরিন ঐশ্বর্য্য, ইফতিফাহ্ বিনতে খালেদ,আসমাউল হুসনা ছড়া ও জান্নাত-ই-জেরিন। টিম লাইলাক-এর সদস্যরা হলেন ইসরাত জাহান, মো মোসাদ্দেক হামীম, তাহসিন মাহমুদ, এস এম রুম্মান, হাসনাত রহমান। টিম লোটাসের সদস্যরা হলেন আজিজুর রহমান ইজাজ,সাবরিনা রুবাইয়াত, মাহমুদ নাহিয়ান, নাফিউল ইসলাম। টিম বিটুমিনাস-এর সদস্যরা হলেন আর রাফি ফেরদৌস, মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, তুলি দাশ। টিম চেকমেট১৯-এর সদস্যরা হলেন তানযীম তাহমীদ রেজা, জোহায়ের মাহতাব,তায়বা বুশরা, কাশফি উদ্দিন। টিম ক্যালসিফ্লাউয়ার এর সদস্যরা হলেন দিবা চৌধুরী, শায়লা শাহরিন স্নিগ্ধা,শাহিদা আক্তার,তালহা জুবায়ের ও শাহরিয়ার মাহমুদ সাদী।

পুরকৌশল বিভাগের টিম লাইলাকের সদস্য মোসাদ্দেক হামীম বলেন, প্রতিযোগিতার পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ চূড়ান্ত বিজয়ী হতে আমাদের কনসেপ্ট পেপারের বাস্তব প্রয়োগ দেখাতে হবে— যা অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ। তাই আমরা আশা করছি চুয়েট কতৃপক্ষ আমাদের সাতটি টিমকেই ল্যাব ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে সাহায্য করবে।

টিম আরকেইক-এর সদস্য সাদিয়া আফরিন ঐশ্বর্য বলেন, প্রতিটি টিম নিজেদের কন্সেপ্ট অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় এনে পেপারগুলো প্রস্তুত করেছে। ভূমিকম্প সহনীয় এবং অগ্নিপ্রতিরোধক নিরাপদ অবকাঠামো তৈরির লক্ষ্যে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারই আমাদের টিমের মূল উদ্দেশ্য ছিলো।

অন্যদিকে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিকুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি আমেরিকান কংক্রিট ইনস্টিটিউট আয়োজিত দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চুয়েট পুরকৌশল বিভাগের চারটি টিম অভাবনীয় সাফল্য পায়, যা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিযোগিতার অনুপ্রেরণা জাগায়। এরই ধারাবাহিকতায় চুয়েট থেকে সাতটি টিম প্রথম রাউন্ডে বিজয়ী হওয়ায় শিক্ষার্থীদের এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস।

উল্লেখ্য, প্রতিযোগিতার পরবর্তী দুই ধাপে প্রোগ্রেস রিপোর্ট ও ফাইনাল রিপোর্ট প্রেরণ ও বিচারকদের যাচাইয়ের মাধ্যমে সেরা তিনটি প্রজেক্টকে নির্বাচিত করা হবে। সেরা তিনটি টিমকে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে ‘ন্যাশনাল স্টেম কম্পিটিশন ২০২১’-এর পর্দা নামবে চলতি বছরের নভেম্বরে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!