চুয়েটের টিএসসি-ক্যাফেটেরিয়া ২ বছরেও চালু হয়নি

চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ও ক্যাফেটেরিয়ার নির্মাণকাজ প্রায় দুই বছর আগে শেষ হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হচ্ছে না।

জানা গেছে, চুয়েটের টিএসসি ও ক্যাফেটেরিয়ার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। এরপর নানান জটিলতা, বাজেট সংকট, টিএসসির যাবতীয় সরঞ্জামাদি এবং আসবাবপত্রের ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে কার্যক্রম শুরু হয়নি। এরপর করোনা মহামারীর প্রায় দেড় বছর কেটে গেছে। ধাপে ধাপে আসবাবপত্র এবং অসম্পূর্ণ কাজগুলোতে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করা হয়। যাতে অতি শীঘ্রই তা ছাত্র-শিক্ষকসহ সকলের জন্য উন্মুক্ত করা যায়। টিএসসিতে কার্যক্রম শুরুর প্রেক্ষিতে ছাত্র সংগঠনগুলো ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করলেও প্রতিবার শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষার্থীরা জানান, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও ক্যাফেটেরিয়া শিক্ষার্থীসহ সকলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুয়েটের এই ভবনের নির্মাণকাজ অনেক আগে শেষ হলেও সেটি সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার কোনো কার্যক্রম আমরা দেখছি না। আমরা চাই, এটি দ্রুত উন্মুক্ত করা হোক।

এদিকে করোনা মহামারীর সময়ে ছোট পরিসরে টিএসসি উদ্বোধনের খবর থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়নি। বিগত দুই বছরে টিএসসিতে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম আয়োজনের তালিকায় রয়েছে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম, নানা সভা-সমাবেশ এবং চলতি বছরে সরস্বতী পূজা। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভবনটি এখনও তালাবদ্ধই থাকতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র মতে, চুয়েটের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৭ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণের জন্য প্রথম ধাপে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে অর্থ দিয়ে ভবনের ভিত্তিকাঠামো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এরপর প্রকল্পের জন্য আর কোনো বরাদ্দ না আসায় নির্মাণকাজ আর এগোয়নি। সেসময় সংবাদমাধ্যমে এটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এরপর আংশিক বাজেট এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন চুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অর্থায়নে ভবনটির নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হয়। নির্মাণকাজ একতলা পর্যন্ত সম্পন্ন করার জন্য সংগঠনটি প্রায় অর্ধ কোটি সমপরিমাণ টাকা অর্থায়ন করে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, প্রথম ধাপে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় প্রকল্পটি শুরু হয়। কিন্তু ১ কোটি ১০ লাখ টাকার কাজ শেষ হওয়ার পর অধিদপ্তর থেকে আর কোনো টাকা আসেনি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরকে প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয়। এরপর নানান জটিলতা পর ২০১৯ সালের শুরু দিকে টিএসসির নির্মাণকাজ শেষ হয়।এরপর ভবনটি কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে চুয়েটের প্রকৌশল দপ্তর।

টিএসসি নির্মাণকাজ শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত পেরিয়েছে প্রায় এক দশকেরও বেশি সময়। বর্তমানে নির্মাণকাজ শেষ হবার পরেও তা চালু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জানেন না কেন চালু করা হচ্ছে না টিএসসির কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজেট কম থাকায় টিএসসির নির্মাণকাজ শেষ হলেও এর কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।

টিএসসি চালু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম স্থাপনাটির কার্যক্রম খুব শীঘ্রই চালু করার বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘কারিগরি অনেক সমস্যার সমাধান করেছি আমরা। খুব শীঘ্রই টিএসসি চালু করা নিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা কিছু নীতিমালা তৈরির কাজে আছি,সেটি শেষ হওয়ার পর আমরা পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য পদক্ষেপ নেবো।’

এদিকে কবে নাগাদ টিএসসি চালু হতে পারে–এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রকল্যাণ থেকে নীতিমালা তৈরির পর তা একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট সভার শেষে আমরা বলতে পারবো। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এ বিষয়ে।’

১৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই ভবন নির্মাণে মোট ব্যয় হয় প্রায় ১১ কোটি টাকা। পূর্ব পাশের তিনতলা অংশের নিচতলায় শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাফেটেরিয়া, ২য় তলায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ক্যাফেটেরিয়া এবং ৩য় তলায় কনফারেন্স কর্নার। পশ্চিম পাশের ভবনের নিচ তলায় থাকবে স্টেশনারি দোকান। ২য় তলা বরাদ্দ হয়েছে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নতুন কার্যালয়। ৩য় তলায় অবস্থিত কক্ষগুলোতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলোর অফিস হিসেবে বরাদ্দের প্রস্তুতি চলছে। ৪র্থ তলায় থাকছে চুয়েট মেডিকেল সহায়তা কেন্দ্র এবং এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন চুয়েট’র দপ্তর।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!