চুরি-ছিনতাই বাড়ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, নিরাপত্তায় প্রশ্ন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনে দিনে বাড়ছে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা। আগে ক্যাম্পাসের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও এবার খোদ অনুষদ ভবন ও শহীদ মিনারের আশপাশেও শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে ৪টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বদলে দর্শনীয় স্থানগুলোতে বিনা অনুমতিতে ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিনদুপুরে মুঠোফোনে কথা বলার সময় শহীদ মিনারের পাশ থেকে ফারসি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ছিনতাই করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে আসা ৪ যুবক। এ সময় তাকে মারধরও করা হয়।

১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পিছনে টেলিটক পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে দিনদুপুরে অস্ত্রের মুখে ছিনতাইয়ের শিকার হন ১৬ শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১টি স্মার্ট ফোন, একটি স্বর্ণের চেন ও নগদ ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

৯ ফেব্রুয়ারি কলা ভবনের শেষ ফটকের সামনে নাট্যকলা বিভাগের ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শরিফুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীর সাইকেল চুরি হয়। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী বিশ্বিবিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে এক ছিনতাইকারীকে আটক করে। পরবর্তীতে তাকে হাটহাজারী মডেল থানায় পাঠিয়ে দেয়।

২ জানুয়ারি একই জায়গায় ঘুরতে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন ৪ শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া গতবছর ডিসেম্বরে জীববিজ্ঞান অনুষদের নিচতলা থেকে এক শিক্ষার্থীর সাইকেল চুরি হয়।

অন্যদিকে, ক্যাম্পাসের দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও পুলিশি অভিযান না চালিয়ে তাতে অনুমতি ছাড়া ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনতাইকারীদের সাথে নিরাপত্তা দপ্তরের লোকজনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলেন অনেকে। শিক্ষার্থীরা যখন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরতে যায় তখন পাহাড়ি ছিনতাইকারীরা কিভাবে খোঁজ পায় তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, এসব নিয়ে কেউ না কেউ তথ্য দিয়ে থাকে। এর প্রেক্ষিতেই হরহামেশা এমন ঘটনা ঘটে থাকে। আর এরা সবাই একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এছাড়া বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা চলাচল করে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিক মুক্তাদির চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা খুব দুঃখজনক। আমাদের ক্যাম্পাসে আমরা মুক্তভাবে চলতে পারি না। আর চলাচল করলেও সময় বিবেচনা করে চলতে হয়। কারণ প্রায়ই শোনা যায় বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ভাই-বন্ধুরা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। এটা অনেকটা নিজের ঘরে নিজে বন্দি থাকার মত ভয়। সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’

অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হুসাইন আল মামুন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রক্টর অফিসের। কিন্তু আমরা গত কয়েকবছর যাবত দেখে আসছি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্রমেই ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। প্রক্টরিয়াল বডি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামান্যতম নিরাপত্তা দিতে পারছে না। ফলে এখন দিনদুপুরেও ছিনতাই হচ্ছে।’

শাখা ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক আমির সোহেল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা জায়গায় প্রকাশ্যে বহিরাগতরা আমাদের এক কর্মীর ওপর অতর্কিত হামলা করে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এ রকম ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। দ্রুত ক্যাম্পাসে এসব বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বিবিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসাস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে চুরি ছিনতাই রোধে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা এসব রোধে কাজ করছি। পাশাপাশি সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। চোর বা ছিনতাইকারীদের কোন তথ্য কারো কাছে থাকলে আমাদের গোপনে জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!