চুক্তির পরও সংযোগ না দিয়ে প্রতারণায় কর্ণফুলী গ্যাস!

জ্বালানিমন্ত্রীর দ্বারস্থ ২৫ হাজার গ্রাহক

অর্থ জমা নিয়ে এবং চুক্তি করেও সংযোগ না দিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) বিরুদ্ধে। সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে কয়েক হাজার শ্রমজীবী ঠিকাদারসহ শ্রমিক, কর্মচারী, ফিটার ও হেলপার বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

গ্রাহকরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে গ্যাস সংযোগের অভাবে ভাড়াটিয়া না পাওয়ার কারণে ঋণে জর্জরিত হয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। অর্থ পরিশোধ করেও সংযোগ না পাওয়া পিছনে কেজিডিসিএলে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আয়ুব খানের দুনীতিকে দায়ী করছেন গ্রাহকেরা। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে গ্যাস সংযোগের অপেক্ষায় থাকা ২৫ হাজার গ্রাহক। কেজিডিসিএল কর্তৃক অনুমোদিত ও প্রদত্ত চাহিদাপত্র অনুযায়ী জামানাতের অর্থ পরিশোধকৃত অপেক্ষমাণ সিরিয়ালে থাকা প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহকের আবাসিক গ্যাস সংযোগসহ সংযোগকৃত বাড়িতে বর্ধিত চুলায় দ্রুত গ্যাস সংযোগের জোর দাবিতে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে কেজিডিসিএল ঠিকাদার ও গ্রাহক ঐক্য পরিষদ।

ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘জামানতের অর্থ নিয়ে চুক্তি করেও চার বছর ধরে ২৫ হাজার গ্রাহকের আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখেছে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ। রাস্তা খননের জন্য সিটি করপোরেশন, সিডিএ সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের ক্ষতিপূরণ ফি পরিশোধ ও মালামাল ক্রয়সহ বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করেও গ্রাহকরা গ্যাস সংযোগ পাচ্ছেন না। গ্যাজেট অনুসারে চুক্তি সম্পাদনের ১৫ দিনের মধ্যে ১৮ দিনের মধ্যে গ্যাস সংযোগ প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও কেজিডিসিএল এখনও পর্যন্ত গ্যাস সংযোগের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। যার ফলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টসহ বিশাল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।’

স্মারকলিপিতে যথাসময়ে অনুমোদিত ও জামানতের অর্থ পরিশোধকৃত গ্রাহকের সংযোগসহ বর্ধিত চুলায় গ্যাস সংযোগ না দিয়ে গ্রাহক বা জনগন যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানি হচ্ছে, তার জন্য সম্পূর্ণরূপে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হয়েছে। ২৫ হাজার গ্রাহককের সংযোগ দেওয়া হলে দৈনিক মাত্র ৪-৫ মিলিয়ন গ্যাস প্রয়োজন হবে।

স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, কেজিডিসিএলের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে হাজার হাজার গ্রাহক, শ্রমজীবী ঠিকাদার, ফিটার, শ্রমিক ও অন্যান্য কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্থ ও কষ্ট পাচ্ছেন।

স্মারকলিপিতে জানানো হয়, চুলা বর্ধিতকরণ কাজ বন্ধ রাখার কারণে গত ৪-৫ বছর ধরে নির্মিত ভবনগুলোতে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু সুবিধাবাদী অসাধু চক্র সহজ-সরল গ্রাহকগণকে বিভ্রান্ত করে অবৈধভাবে চুলা বর্ধিতকরণে উৎসাহিত করছে এবং প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

এ অবস্থায় স্মারকলিপিতে গ্রাহকের প্রচুর অর্থ ব্যয় করে গ্যাস সংযোগ না পাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার জন্য ঠিকাদারকে দায়ী করে গ্রাহক ঠিকাদার মুখোমুখি সাংঘর্ষিক ও অপ্রীতিকর অবস্থা থেকে বিরত রাখার স্বার্থে দ্রুত কেজিডিসিএল কর্তৃক অনুমোদিত ও জামানতের অর্থ পরিশোধকৃত গ্রাহকদের আবাসিক সংযোগসহ বর্ধিত চুলায় গ্যাস সংযোগের জোর দাবি জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কেজিডিসিএল ঠিকাদার ও গ্রাহক ঐক্য পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী নাওয়াজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গ্রাহক-ঠিকাদার-কেজিডিসিএল ত্রিপক্ষীয় চুক্তি এবং সিরিয়াল দেওয়ার পরও আমরা গ্যাস সংযোগ পাচ্ছি না। কেজিডিসিএল টাকা নিয়েছে, তারাই সংযোগ দিবে। আমরা নতুন সংযোগ চাচ্ছি না। যে টাকাগুলো নেওয়া হয়েছে, তার বিপরীতে সংযোগ দেওয়া হোক। নতুন সংযোগের সাথে এর সম্পর্ক নেই। কেজিডিসিএলের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে আমাদের গ্যাস সংযোগ আটকে আছে। সংযোগ না দেওয়ার পিছনে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আয়ুব খানের দুর্নীতি দায়ী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। এ ব্যাপারের সহযোগিতা চেয়ে আমরা জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!