চীনের চোখ চট্টগ্রামে, ২ লাখ মানুষ কাজ পাবে আনোয়ারার অর্থনৈতিক অঞ্চলে

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে চীন। আট বছর আগেও এ নিয়ে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করার পর উদ্যোগটিতে হঠাৎ ভাটা পড়ে। এরপর উদ্যোগটি আবার নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান এই অর্থনৈতিক পরাশক্তি দেশটি।

দ্রুতই এখানে নির্মাণকাজ শুরুর আশা প্রকাশ করেছে চীন।
দ্রুতই এখানে নির্মাণকাজ শুরুর আশা প্রকাশ করেছে চীন।

জানা গেছে, চীনের এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৭৮৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীরে আনোয়ারা উপজেলার বেলচূড়া এলাকায় চীনের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেল থেকে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯ কিলোমিটার, শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার এবং শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল অবস্থিত।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীনের চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীনের চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন।

চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে ওষুধ, তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, রাসায়নিক, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, প্লাস্টিক পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, ফার্নেস ও সিমেন্ট কারখানা হতে পারে। সেখানে স্থাপিত হবে ৩৭১টি শিল্পকারখানা। এতে দেশের প্রায় ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) আনোয়ারার ওই ৭৮৩ একর জমির ওপর ‘চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন’ স্থাপনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীনের চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেজা কার্যালয়ে এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ঝাও লিয়ানঝি এবং বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংও এসময় উপস্থিত ছিলেন।

২০০৯ সালে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনায় হাত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি, বেসরকারি, জিটুজি ও বিদেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল মিলিয়ে ইতোমধ্যেই ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান চিহ্নিতকরণ শেষ হয়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরকালে চীনা সরকার বাংলাদেশের চট্টগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনের আগ্রহ ব্যক্ত করে। ওই সফলে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর দুই বছর পর ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ঢাকা সফরে এলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ সময় ঠিক হয় অর্থনৈতিক অঞ্চলটির অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। কিন্তু দীর্ঘদিনেও বেজার সঙ্গে চায়না হারবারের কোনো চূড়ান্ত চুক্তি না হওয়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চলটির কোনো কাজ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় আট বছর পর চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলটি স্থাপনে চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করল বেজা।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ইতিমধ্যে ৭৮৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পে দুটি সংযোগ সড়কসহ অন্যান্য ইউটিলিটি স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে।অর্থনৈতিক অঞ্চলের অফ সাইট অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে বেজা। আনোয়ারার পিএবি প্রধান সড়ক কালাবিবি দীঘি থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের এবং অন্যটি বৈরাগ থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত চার লেনের এক কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হয়েছে। বৈরাগ অংশে তৈরি করা হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর। সমান করা হয়েছে প্রকল্প এলাকার ২০০ একর পাহাড়ি টিলা।

অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ উদ্যোগ এক বিশাল কর্মযজ্ঞের সূচনামাত্র। একটি পরিকল্পিত চাইনিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির মাধ্যমে তার সফল পরিসমাপ্তি ঘটবে।’

চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি ধারা প্রশংসনীয়ভাবে অর্জন করেছে। চীন সরকার ও তার জনগণ সার্বিকভাবে বাংলাদেশের এই উন্নয়নের সঙ্গে কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে চায়।’

তিনি উল্লেখ করেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে পূর্ণতা দানে তার সরকার দ্রুত কাজ করতে বদ্ধপরিকর।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!