চীনা ভাইরাসের আতঙ্কে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে রেড অ্যালার্ট

স্ক্রিনিং হচ্ছে যাত্রীদের, চার হটলাইন

চীনের রহস্যময় ‘করোনা’ নামে এক নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সতর্কতা হিসেবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং করতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম। বিদেশ থেকে আসা সব যাত্রীকেই স্ক্রিনিং করা হচ্ছে বর্তমানে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার সরওয়ার ই জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, শাহ আমানত বিমানবন্দরে সর্তকতা জারি করা হয়েছে। নতুন ভাইরাসকে নিয়ে আমরাও পূর্ব সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘আমি এখন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আছি। এখানে বিভিন্ন পোস্টার লাগানো হচ্ছে। সতর্ক করা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। তবে এটাতে বিচলিত হওয়ার কোন কারণ নেই। সতর্ক থাকলেই হচ্ছে। এর জন্য আরো বেশি সচেতনতা প্রয়োজন।’

জানা গেছে, চীনের কর্তৃপক্ষ গত দুই দিনে ১৩৯ জন এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। গত ডিসেম্বরে ইউহান শহরে প্রথম যে সংক্রমণের ঘটনা ঘটে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তাকে ‘করোনা ভাইরাস’ বলে শনাক্ত করেছিল। গত সপ্তাহেই সিঙ্গাপুর, হংকং, সান ফ্রান্সিসকো, লস এঞ্জেলস এবং নিউইয়র্কে চীন থেকে আসা ফ্লাইটগুলোর যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছিল। এবার বাংলাদেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও স্ক্রিনিং শুরু করার কথা জানানো হয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। এরপর চট্টগ্রামেও স্ক্রিনিং শুরু হল।

প্রসঙ্গত, ইউহানের পর চীনের নতুন নতুন শহরেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে আছে বেইজিং এবং শেনঝেন শহরের বাসিন্দারাও।

এদিকে, থাইল্যান্ড এবং জাপানের পর দক্ষিণ কোরিয়া সোমবার (২০ জানুয়ারি) জানাচ্ছে সেখানেও এই একই ভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে অন্তত তিন জন।

বাংলাদেশে সর্তকতা
ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) বলছে, তারা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কারণ চীন থেকে আসা সব বিমান এই বিমানবন্দর দিয়েই ওঠানামা করে। এছাড়া অন্যান্য বন্দরেও চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, যারা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা— জ্বর, কাশি, গলাবাথ্যা এসব নিয়ে আসছেন তাদের চেক করা হচ্ছে। যখন শ্বাসতন্ত্রের অসুখ হয় তখন হাঁচি-কাশি থেকে আরেকজন সংক্রমিত হতে পারে এটা ভেবে নিয়েই প্রস্তুতি চলছে। কারণ যদি একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায় তাহলে অতি দ্রুত সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই রোগ ধরা পড়লে তার সাথে অন্য কাউকে মিশতে দেওয়া যাবে না।

চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ও স্বাচিপ নেতা ডা. শেখ শফিউল আজম বলেন, বাংলাদেশে এখনো ‘করোনা ভাইরাসে’ কারো আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বিমানবন্দরে স্থাপিত হেলথ ডেস্কে এসব কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। যেসব ফ্লাইট চীন থেকে আসছে সেসব ফ্লাইটের যাত্রীদের স্ক্যানিং করা হচ্ছে।

চার হটলাইন
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইইডিসিআর চারটি হটলাইনও খুলেছে। উল্লেখিত লক্ষণগুলো কারও মধ্যে দেখা গেলে এসব হটলাইনে ফোন করে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। নম্বরগুলো হচ্ছে— ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫।

আইইডিসিআর বলছে, কারও শরীরে এর কোন লক্ষণ দেখা গেলে তারা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখবেন। এছাড়া বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন, এয়ারলাইন্সগুলো এবং এভিয়েশনে কাজ করা সবাইকে সচেতনও করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিমানবন্দরে যে এলইডি মনিটর রয়েছে সেখানে রোগের লক্ষণগুলো জানানো হচ্ছে এবং এবং কারও যদি এই লক্ষণগুলো থাকে তার হেলথ ডেস্কে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

সংক্রমণ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?
আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে তা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

চীনের কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই সংক্রমণ যে ভাইরাসের কারণে হচ্ছে সেটি আসলে এক ধরনের ‘করোনা ভাইরাস। গবেষকরা বলছেন, সামুদ্রিক মাছের বাজার এই ভাইরাসের উৎসস্থল। অনেক ধরনের ‘করোনা ভাইরাস’ রয়েছে, কিন্তু শুধু ছয় ধরনের ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। নতুন ভাইরাসসহ এটি হবে সপ্তম।

একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা দেয় সাধারণ সর্দি, কিন্তু মারাত্মক ধরনের সংক্রমণ বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে সার্স হচ্ছে এক ধরনের ‘করোনা ভাইরাস’। যাতে ২০০২ সালে ৮ হাজার ৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছিল এবং এদের মধ্যে ৭৭৪ জন মারা যায়।

ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য (জেনেটিক কোড) বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, মানুষকে আক্রান্ত করা অন্য ‘করোনা ভাইরাসের’ তুলনায় সার্সের সাথে এটির বেশি মিল রয়েছে।

ভাইরাসটা কি ছোঁয়াচে?
প্রাথমিকভাবে গবেষকরা বলেছিলেন যারা চীনের ইউহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে যারা কোন মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি। অবশ্য এই ভাইরাস সম্পর্কে এখনো খুব বেশি তথ্য নেই গবেষকদের কাছে।

ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা আইইডিসিআর এর পরিচালক ডা. সেবরিনা ফ্লোরা সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং তারা আশঙ্কা করছে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে এটি। তবে এখনও এত বৃহৎ পরিসরে ভাবছে না সংস্থাটি। ভাইরাসটা ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!