চিম্বুক পাহাড়ে সিকদারের পাঁচতারা হোটেল নিয়ে ক্ষোভের আগুন

১০ হাজার জুমচাষী উদ্বাস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচতারা ম্যারিয়ট হোটেল ও বিনোদন পার্কের কাজ শুরু হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। সিকদার গ্রুপের আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংস লিমিটেড এবং আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

এটি চিম্বুক-থানচি রুটে এবং বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৪৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। কাপ্রু পাড়া থেকে নাইতং পাহাড় হয়ে জীবননগর পর্যন্ত এই পাঁচ তারকা হোটেল এবং পর্যটন স্পট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এতে মূল হোটেল ভবন ছাড়াও এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১২টি পৃথক ভিলা, আধুনিক কেবল কার থাকবে। সেখানে রাইড এবং সুইমিং পুলসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদন সুবিধা থাকবে বলে জানানো হয়।

হোটেলটি যেখানে নির্মিত হচ্ছে, সেখানে রয়েছে অনেকগুলো গ্রাম— যেখানে ম্রো আদিবাসীদের বসবাস। অভিযোগ তোলা হয়েছে, চিম্বুক পাহাড়ে বসবাসকারী ম্রো সম্প্রদায়ের এক হাজার একর জমি বেদখল করে এই পাঁচ তারকা হোটেল ও পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে।

চিম্বুক পাহাড়ে সিকদারের পাঁচতারা হোটেল নিয়ে ক্ষোভের আগুন 1

এর প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সংহতি সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় এলাকায় অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন ও সমাবেশে অনতিবিলম্বে এসব নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবি জানানো হয়।

এতে বক্তারা বলেন, সিকদার গ্রুপের এই হোটেল চিম্বুক পাহাড়ে নির্মাণ হলে প্রত্যক্ষভাবে ম্রোদের চারটি পাড়া এবং পরোক্ষভাবে ৭০ থেকে ১১৬টি পাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে প্রায় ১০ হাজার জুমচাষী উদ্বাস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন।

বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আদর্শকে সামনে রেখে পাহাড়িদের ভূমি দখল নয়, পাহাড়িদের নিজস্ব অধিকার দিতে হবে এবং চিম্বুক পাহাড়ে অবিলম্বে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ ও ম্রো উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।’

চিম্বুক পাহাড়ে সিকদারের পাঁচতারা হোটেল নিয়ে ক্ষোভের আগুন 2

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের চট্টগ্রাম-৩ অঞ্চলের সভাপতি এডভোকেট ভুলন লাল ভৌমিক বলেন, ‘বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণকে নিশ্চিহ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।’

জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কেন্দ্রের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘চিম্বুক পাহাড় রক্ষার্থে যে আন্দোলন সূচনা করেছে সেই আন্দোলকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোদের ভূমি যদি দখল করা হয়, তাহলে ম্রো জনগোষ্ঠীসহ আমরা সমতলে সকল পেশাজীবী মানুষ জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলবো।’

প্রতিবাদ সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

চিম্বুক পাহাড়ে সিকদারের পাঁচতারা হোটেল নিয়ে ক্ষোভের আগুন 3

এর আগে গত রোববার (৮ নভেম্বর) বান্দরবানের কাপ্রু পাড়া বাজার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন পাড়ায় বসবাসরত প্রায় এক হাজার ম্রো জনগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায়। সেখানে বান্দরবানে চিম্বুক পাহাড়ে বসবাসরত ম্রো জনগোষ্ঠী পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ ও পর্যটনের নামে তাদের প্রাচীন জুম ভূমি কেড়ে না নেওয়ার দাবি জানায়। এই স্থাপনা নির্মাণে সিকদার গ্রুপ প্রায় এক হাজার একর জুমের জমি দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন প্রতিবাদকারীরা। তারা জানান, জুম ভূমি ছাড়াও সেখানে রয়েছে ম্রোদের বসতভিটা ও শ্মশান।

ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণের নাম করে ম্রো জনগোষ্ঠীর বসত ভিটা ও জুম চাষের জমি দখলের চক্রান্ত বন্ধের দাবি জানিয়েছে আরও বিভিন্ন সংগঠন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন পৃথক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানিয়েছে।

ম্রো সম্প্রদায়ের জায়গা দখল করে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, চট্টগ্রাম জেলা শাখাও। কমিটির সভাপতি আবু হানিফ ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ম্রোদের জমি দখল করে হোটেল নির্মাণ পার্বত্য শান্তিচুক্তির মূল লক্ষ্যের বিরোধী এবং পরিবেশ বিরোধী। এই সিদ্ধান্তের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবিক এবং পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!