চিটাগং শপিংয়ে ‘জল ঘোলা’ করে সেই পানিই খেলেন প্রশাসক সুজন

বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শকে পাত্তাই দিলেন না

চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সে নির্মাণ চলতে থাকা অবৈধ স্থাপনা নিয়ে কিছুদিন হাঁকডাক করে ফের সেই স্থাপনাগুলো নির্মাণের অনুমতি দিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এমনকি নিজে বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে সেই কমিটির রিপোর্টও আমলে নেননি।

সোমবার (১২ অক্টোবর) ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সে আপত্তি আসা স্থাপনাগুলো নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এর বাইরে শুধু পার্কিং ও তৃতীয় তলার কিছু অংশ ভেঙে ফেলতে হবে বলে ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে।

চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের পার্কিংয়ের জায়গাসহ আলো-বাতাস চলাচলের জন্য রাখা খোলা স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে দোকান। দোকান নির্মাণের নামে এমন অরাজকতায় শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

ছাদের ওপরে আরো এক তলা নির্মাণ করা হচ্ছে লোহার ফ্রেম ও অ্যাঙ্গেল বসিয়ে।
ছাদের ওপরে আরো এক তলা নির্মাণ করা হচ্ছে লোহার ফ্রেম ও অ্যাঙ্গেল বসিয়ে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সে পার্কিংয়ের জায়গাসহ খোলা জায়গায় নির্বিচারে দোকান নির্মাণ নিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তাজুল ইসলামের নজরে আসার পর তিনি অভিযোগটি দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনকে। এর পরপরই দোকান নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন চসিক প্রশাসক সুজন।

মন্ত্রীর নির্দেশের কথা নিশ্চিত করে চসিক প্রশাসক সে সময় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘খালি জায়গায় দোকান, ‘গুদামঘরে’ রূপ নিচ্ছে চিটাগং শপিং কমপ্লেক্স— শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি এলজিআরডি মন্ত্রী মহোদয়েরও নজরে এসেছে। মন্ত্রী কিছুক্ষণ আগে আমাকে সশরীরে গিয়ে জায়গাটি পরিদর্শন করে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে নির্মাণকাজ বন্ধ সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।’

খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদনটি দেখে আজ (৫ সেপ্টেম্বর) সকালেও নির্মাণকাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) সরাসরি চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের পার্কিংয়ের জায়গাসহ আলো-বাতাস চলাচলের জন্য রাখা খোলা স্থানে পরিদর্শনে যাবো। এরপর এটি নিয়ে গণশুনানি করবো। চট্টগ্রামের আলো-বাতাসের গতিরোধ করে বাণিজ্যিক স্থাপনা করা যাবে না।’

এর পর গত ১০ সেপ্টেম্বর চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য রাখা খোলা জায়গা ও পার্কিংয়ে দোকান নির্মাণ এবং ঝুঁকিপূর্ণভাবে উর্ধ্ব সম্প্রসারণের অভিযোগ এনে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন সিটি করপোরেশনের প্রশাসক। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রকৌশলীর মাধ্যমে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। ওই কমিটি শপিং কমপ্লেক্সে আদৌ বর্ধিত স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে কি না তা যাচাই করতে চুয়েট বা বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু এই পরামর্শ আমলে না নিয়ে চসিক প্রশাসক আবার নির্মাণ কাজ শুরুর অনুমতি দিলেন।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট সদ্যবিদায়ী চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দোকান নির্মাণের কাজটি দিয়েছেন জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান শামীম করপোরেশনকে।

নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ষোলশহরে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ে নির্মিত চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের রূপ পরিবর্তন করে বর্তমানে সেখানে পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গায় দোকান নির্মিত হচ্ছে। শপিং কমপ্লেক্সের ভেতরে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য রাখা খোলা স্থানে নির্মাণ হচ্ছে দোকানগুলো।

শুধু তাই নয়, কমপ্লেক্সের সামনে ও পেছনে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাখা স্থানেও নির্মাণ হচ্ছে দোকান। নিচে মহিলা টয়লেট ও জেনারেটর রুম সবকিছু ভেঙে দোকানগুলো তৈরি হচ্ছে। অথচ টয়লেট, জেনারেটর রুম ও পার্কিং স্থানে দোকান করার কোনো অনুমোদনও নেই। এদিকে শপিং কমপ্লেক্সের ছাদের ওপরে আরো এক তলা নির্মাণ করা হচ্ছে লোহার ফ্রেম ও অ্যাঙ্গেল বসিয়ে।

দোকান নির্মাণের নামে এমন অরাজকতায় শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গত জুন মাসে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ না করার জন্য মানববন্ধনও করেছে। চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সে বর্তমানে ৩৮০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। অবৈধ এসব দোকান নির্মাণ বন্ধ না হলে তারা আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!