চিকিৎসায় অনীহা নয়, ১০ ডাক্তারের অব্যাহতির পেছনে অন্য কাহিনী!

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ৫০ জন স্থায়ী অভিজ্ঞ ডাক্তার থাকলেও আইসোলেশন সেন্টারে দিতে চায় কম অভিজ্ঞ অস্থায়ী ডাক্তারদের

করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে অনীহা জানানোয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১০ জন অস্থায়ী চিকিৎসককে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানানো হলেও অব্যাহতি পাওয়া ডাক্তাররা বলছেন, তারা চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করেননি। অস্থায়ী এসব চিকিৎসক শুধু চেয়েছিলেন তাদের চাকরিটা স্থায়ী করা হোক। করোনার চিকিৎসা দেওয়ার আগে চাকরি স্থায়ী করার দাবি জানিয়েছিলেন তারা।

আবার করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সিটি কর্পোরেশনের সদিচ্ছা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে অন্তত ৫০ জন স্থায়ী ডাক্তার আছে। তাদের কাউকেই আইসোলেশন সেন্টারে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ এরা অভিজ্ঞ। তাদের নিরাপদে রেখে করোনা চিকিৎসার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী ও তুলনামূলক কম অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তিনদিন আগে নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ২৫০ শয্যার একটি আইসোলেশন সেন্টার উদ্বোধন করা হয়। ১৫ জুন থেকে সেখানে রোগী ভর্তি নেওয়ার কথা ছিল।

করোনা চিকিৎসায় অনীহা জানানোর কারণ কী— এই বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় অব্যাহতি পাওয়া একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কখনোই বলিনি আমরা করোনা রোগীদের সেবা দেবো না। কিন্তু আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা অস্থায়ী চাকরি করি। অল্প কিছু টাকা বেতন পাই। যেখানে সিটি কর্পোরেশনে ৫০ জনের মত স্থায়ী ডাক্তার আছে। তাদের কাউকে তো আইসোলেশন সেন্টারে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।’

‘আমরা মেয়র মহোদয় ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে দাবি করেছি আমাদের চাকরিটা যাতে স্থায়ী করা হয়। উনারা মৌখিকভাবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। লিখিতও দিতে রাজি হননি। এছাড়া মানসিক প্রস্তুতিরও তো একটা ব্যাপার থাকে। আমাদের হুট করে বলা হলো মিটিংয়ে আসো। মিটিংয়ে বলা হলো কাল থেকে ট্রেনিংয়ে যেতে হবে। আমার বাসায় আমি আর আমার বাবা-মা থাকে। তাদের কী হবে, আমি নিজে কী করবো— সেটা নিয়ে ভাবারও সময় পাইনি আমরা’— যোগ করেন ওই চিকিৎসক।

পাশাপাশি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়েও কিছু সমস্যা ছিল জানিয়ে ওই ডাক্তার বলেন, ‘আমাদের বলা হলো বাসা থেকে এসে চিকিৎসা দিতে হবে আমাদের। চিকিৎসা দিয়ে আবার বাসায় চলে যাব। আলাদা কোথাও কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। এটা কিভাবে সম্ভব?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই ১০ জনের ৭ জন গত তিন মাস ধরে চসিকের করোনা কন্ট্রোল রুমেও কাজ করছেন। চসিকে স্থায়ী-অস্থায়ী ২০০ ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও আমাদেরই আবার এখানে নিয়োগ দেওয়া হলো। গত তিন মাস যে কাজ করছি, এটা কোথাও এলো না। অথচ এখন বলা হচ্ছে আমরা সেবা দিতে অনীহা দেখিয়েছি।’

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৬ জুন) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে ১০ চিকিৎসকসহ ১১ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। তাদের জায়গায় আরও ১০ চিকিৎসককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ শেষে আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হবে বলে তিনি জানান।

এই ১১ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণ হিসেবে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চিকিৎসক। আমাদের মাঝে ধনী- গরিব, মানুষ কিংবা রোগের কোনো ভেদাভেদ নেই। যে কোন রোগের চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া আমাদের প্রধান কাজ। করোনা ছোঁয়াচে রোগ। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য আমরা আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত করেছি। যাদের সেখানে পদায়ন করা হয়েছে তারা কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করেছে। তাই আমরা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চাকরি থেকে ১০ চিকিৎসকসহ ১১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!