চিকিৎসকদের জন্য আসছে ‘সুরক্ষা আইন’!

বায়োমেট্রিক হাজিরার বিরোধিতায় চিকিৎসক নেতারা

এবার চিকিৎসক সুরক্ষা আইন করার ঘোষণা দিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান। শুক্রবার (১০ মে) বিকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিদর্শন উপলক্ষে চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।

ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে ডা. মুরাদ হাসান বলেন, ‘যত শিগগিরই সম্ভব চিকিৎসক সুরক্ষা আইন করা হবে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন খুব তাড়াতাড়ি পাস হবে। এর ফলে কেউ চিকিৎসা সেবার বাইরে থাকবে না। জনগণের দোর গোড়ায় আমরা চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে চাই।’

মতবিনিময় সভায় বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী ডাক্তারদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরার বিষয়ে বিরোধিতা করলে এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ডাক্তার নেই, ডাক্তার নেই – দেশে এর চেয়ে বড় অভিযোগ নেই। অভিযোগের তীর ডাক্তারদের দিকে। ডাক্তারদের সাথে অন্য পেশার তুলনা করতে পারি না। মানুষ জীবন বাঁচানোর জন্য ডাক্তারের কাছে আসে। মানুষ ডাক্তারের কাছে অসহায়। তারা কাকুতি নিয়ে আসে – এ কথা মনে রাখতে হবে। আমি চাই না অভিযোগের আঙ্গুল ডাক্তারদের দিকে উঠুক। ডাক্তারদের বলা হয় সেকেন্ড গড।’

তিনি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘ভালো ডাক্তার হওয়ার আগে ভালো মানুষ হতে হবে।’

ডা. রবিউল আলমের সঞ্চালনায় শাহ্ আলম বীরউত্তম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পরিচালক মো. শরীফ, চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদ, অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মো. জাহাঙ্গীর, ইউরোলজি বিভাগের প্রধান মনোয়ারুল হক শামীম, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী।

জনবল, যন্ত্রপাতি ও অর্থ সংকটে চমেক হাসপাতাল

মতবিনিময় সভার শুরুতে বক্তব্য রাখেন চমেক হাসাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘জনবল, যন্ত্রপাতি ও অর্থ সংকটে ভুগছে চমেক হাসপাতাল। এসব কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তা সত্বেও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মহোদয় সব স্বচক্ষে দেখেছেন। আমাদের প্রয়োজন পূরণ করার আশ্বাস দিয়েছেন।’

নিজেদের কাছে দলিল নেই চমেক হাসপাতালের

মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘চমেক হাসপাতাল একমাত্র প্রতিষ্ঠান; যেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নিজে উদ্বোধন করেছিলেন। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের দলিল এখনো আমাদের হাতে নেই। ৮০ একর জায়গার মধ্যে ১০ একর জায়গা বেহাত হয়ে গেছে। এ কারণে ৮০০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি এসেছে।’

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে চমেক হাসপাতালের দলিল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ডা. জাহাঙ্গীর আরো বলেন, ‘শিক্ষাদানের পাশাপাশি আমাদেরকে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। আমাদের শিক্ষক সংকট রয়েছে। ১৩০০ শয্যাসংখ্যার হাসপাতালে তিন হাজারের ওপর রোগী ভর্তি থাকে। অনেক রোগীকে ফ্লোরে রাখতে হয়।’

প্রতিমন্ত্রীকে ডা. ফয়সাল ইকবালের প্রশ্ন

সভায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ডাক্তারদের হাজিরার দেওয়ার বিরোধিতা করেন বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী। তিনি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি আমাদের লোক। আমাদের অভিভাবক। বিদেশ ছুটি, শিক্ষা ছুটি, পদোন্নতি বায়োমেট্রিক হাজিরা দিয়ে করা হবে। আপনি বায়োমেট্রিক পদ্ধতি দিয়ে ডাক্তারদের সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন? অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন করতে বিকাল চারটা বেজে যায়। রাতের ডিউটি কিভাবে আপনি বায়োমেট্রিক পদ্ধতি দিয়ে করবেন?’

এ সময় তিনি চমেকে হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপকের পদ পূরণের দাবি জানান।

এর জবাবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান বলেন, ‘বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা ডাক্তারদের অসম্মান করার জন্য নয়। বিদেশ যেতে, পদোন্নতির জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা লাগবে বলে আমি মনে করি না।

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!