চা শিল্পের দুর্দিন, খরায় মরা পড়ছে চা গাছ—অপেক্ষা বৃষ্টির ফোঁটার

ছয় মাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় মরা পড়ছে চা গাছ। এতে ক্ষতি শিকার চট্টগ্রামের ২১টি চা বাগান। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে বৃষ্টির দেখা মিললেও এবার ঘটছে তার ব্যতিক্রম। এপ্রিলে এসেও বৃষ্টির দেখা নেই। প্রকৃতির এ বিদ্রুপ আচরণই বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাব বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিনে কয়েকটি চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। সবুজ বাগানগুলো বিবর্ণ হয়ে গেছে। বাগানের নতুন প্লান্টেশনের চারাগাছ (ইয়ং টি) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাগানের খন্ড খন্ড অংশ জ্বলে গেছে। যা দেখতে আগুনে পুড়ে ঝলসে যাওয়ার মতো দেখাচ্ছে। কোনো কোনো বাগানে শ্রমিকরা কলসি, বালতি ইত্যাদি দিয়ে পানির সেচ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারি হতে মার্চ পর্যন্ত তিনমাসে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় এক দশমিক ৬৯ মিলিমিটার। অথচ এ বছর এখনও বৃষ্টির ছিঁটেফোঁটারও দেখা মেলেনি। ফলে নিরুপায় বাগানের মালিক-শ্রমিকরা আকাশের দিকে থাকিয়ে আছেন বৃষ্টির আশায়।

সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, খরা পরিস্থিতি এভাবে আর কিছুদিন অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবার চায়ের উৎপাদনে চরম ধস নামবে। এছাড়া বাগানগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অথচ শ্রীমঙ্গলে মার্চ মাসে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৩১ মিলিমিটার। আগাম বৃষ্টির কারণে ওই অঞ্চলে চায়ের বাম্পার উৎপানের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামে চা বাগানগুলোর মধ্যে মোহাম্মদ নগর, আধারমানিক, নাছেহা, দাঁতমারা, পঞ্চবটি, মা জান, এলাহি নূর, কৈয়াছড়া, কর্ণফুলী, উদালিয়া, নেপচুন, রামগড়, বারোমাসিয়া, রাঙ্গাপানি, নিউ দাঁতমারা, কোদালা, বেলগাও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চা বাগানের মালিকরা জানান, গত নভেম্বর মাস হতে এখন পর্যন্ত বৃষ্টির ছিঁটেফোঁটাও পড়েনি এ অঞ্চলে। দিনে প্রচন্ড রোদে তাপমাত্রা ৩৭-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকছে। এ অবস্থায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। বাগানগুলোতে অনেকটা হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।

ব্র্যাকের মালিকাধীন কর্ণফুলী চা বাগানের ডিজিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। শ্রমিকদের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। গাছে নতুন কুড়ি নেই। খন্ড খন্ড বাগান জ্বলে যাচ্ছে খড়ায়।

তিনি বলেন, ৬ মাসের তীব্র খরায় চট্টগ্রামের বাগানগুলোর প্রায় ২৫ ভাগ ইয়ং টি গাছ রোদে শুকিয়ে মরে গেছে। আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হলে হয়তো জুন-জুলাইয়ে স্বল্প পরিমাণে উৎপাদনে যেতে পারবে বাগানগুলো। অথচ শ্রীমঙ্গলে এবার পর্যাপ্ত পরিমাণ আগাম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে ওখানকার বাগানগুলোতে দ্রুত কুঁড়ি ও পাতা গজিয়েছে। ফলে তারা আমাদের আগেই উৎপাদন শুরু করতে পেরেছে। এ অবস্থায় এবার চা উৎপাদনে চট্টগ্রাম অঞ্চল অনেক পিছিয়ে থাকবে বলে মনে হচ্ছে।

নেপচুন বাগানের জিএম কাজী ইরফান উল্লাহ বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে শুধু উৎপাদন হ্রাস পাবে তা নয়, চায়ের গুণগত মানও ক্ষুণ্ন হবে। রোগবালাই বৃদ্ধি পাবে।

রাঙ্গাপানি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক উৎপল বিশ্বাস বলেন, খরার তীব্রতা যান্ত্রিক সেচের মাধ্যমে মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এখন উৎপাদনের চেয়ে বাগানের গাছগুলো বাঁচানোর লড়াই করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম আবহওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জল কান্তি পাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে চট্টগ্রামে। কিন্তু এ বেল্টে কাল বৈশাখির কোন পূর্বাভাস নেই। তবে, সপ্তাহের মাঝামাঝি বৃষ্টি হলেও আবার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে।

এএস/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!