চাহিদার অর্ধেক ওয়্যারহাউসই নেই চট্টগ্রাম বন্দরে, কনটেইনারের জট

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন্দরসমূহে টার্মিনাল অপারেটর নিয়োজিত আছে এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কার্গো-কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে আসছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানির কনটেইনার বন্দরের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করা হয়। এমনকি এলসিএল কনটেইনার সিএফএসে আনস্টাফিং করা হয়। এছাড়া এফসিএল (ফুল কনটেইনার লোড) কনটেইনারও টার্মিনাল ইয়ার্ডে হ্যান্ডলিং করতে হয়। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ইয়ার্ডে সব সময় কনটেইনার/পণ্য জট লেগে থাকে এবং বিভিন্ন জটিলতার সৃৃষ্টি হয়।

এ অবস্থায় বন্দরের কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জিত হচ্ছে না। বিদেশে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে উন্নত দেশের বন্দরগুলোর মতো ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারদের নিজস্ব বন্ডেড ওয়্যারহাউস বা সিএফএস থাকা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুুসারে এফসিএল সরাসরি আমদানি-রফতানিকারকের গন্তব্যে পৌঁছার কথা। রফতানি পণ্য রফতানিকারকের কারখানা থেকে ফরওয়ার্ডারদের বন্ডেড ওয়্যারহাউস বা সিএফএসে পণ্য স্টাফিং এবং আনস্টাফিং করার সুযোগ দিলে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বা ডেলিভারি ইয়ার্ডে পণ্যসহ কনটেইনার জট বহুলাংশে হ্রাস পাবে।

সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সহায়তায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক কর্মশালায় উপস্থাপন করা ‘বাংলাদেশ লজিস্টিকস কস্ট স্টাডি’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাহিদার ৫০ শতাংশ বন্ডেড ওয়্যারহাউস নেই দেশে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে দেশে বেড়ে চলেছে ওয়্যারহাউস স্টোরেজের চাহিদা। বর্তমানে দেশে মোট ওয়্যারহাউসের পরিমাণ ৪ কোটি ৩৭ লাখ বর্গফুট। এ মুহুর্তে চাহিদা আরও বেশি। মোট চাহিদার পরিমাণ ৮ কোটি ৫২ লাখ বর্গফুট। সে হিসেবে দেশে ওয়্যারহাউসের ঘাটতি রয়েছে ৪ কোটি বর্গফুটের বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ওয়্যারহাউসের ঘাটতি বেড়ে ৭ কোটি বর্গফুটের ওপরে যেতে পারে বলে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বন্দর ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ওয়্যারহাউসের অবস্থা সন্তোষজনক নয়। এমনকি চাহিদার অর্ধেক। একদিকে আমদানি-রফতানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে তুলনায় ওয়্যারহাউস অপর্যাপ্ত এবং যা আছে, তা আন্তর্জাতিকমানের নয়। আন্তর্জাতিকমানের ওয়্যারহাউস করা গেলে রফতানি বাণিজ্য আরো প্রসারিত হবে। এ অবস্থায় দেশে ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রসারে আন্তর্জাতিক মানের ওয়্যারহাউস নির্মাণ করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই।’

এদিকে এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) উপদেষ্টা কমিটির সভায় প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশ (বাফা)।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র পরিচালক মোহাম্মদ আতিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রয়োজনের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের ওয়্যারহাউস কম। ১০০টার চাহিদা থাকলে পাওয়া যাবে ৫০টি। বন্দরের ওয়্যারহাউস আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মো. শাহেদ সারোয়ার বলেন, ‘আন্তর্জাতিকমানের বন্দরগুলোতে বন্দরের বাইরে ওয়্যারহাউস আছে। সেখানে আমদানি-রফতানিকারকদের পণ্য রাখা হয়। ফলে সে সব বন্দরে কনটেইনার জট হয় না। চট্টগ্রাম বন্দরের বাইরে ওয়্যারহাইস তৈরি করে সেগুলো ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের ব্যবহার করতে দিলে তারা উপকৃত হবে। পাশাপাশি বন্দরে কনটেইনার জট হবে না। বন্দরের উন্নয়ন হবে। এর আগে বন্দরের অভ্যন্তরের ওয়্যারহাউসগুলো ভেঙ্গে সেখানে টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে।’

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) পরিচালক (পোর্ট অ্যান্ড কাস্টম) খায়রুল আলম সবুজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর পুরোটাই বন্ডেড ওয়্যারহাউস। কিন্তু পৃথিবীর কোন বন্দরে বন্দরের ভেতর থেকে পণ্য ডেলিভারি হয় না। বন্দরের বাইরে ওয়্যারহাউস থেকে সব প্রক্রিয়া হয়ে থাকে। সব দেশে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের নিজস্ব ওয়্যারহাউস থাকে। বাংলাদেশে এই সিস্টেম নেই। সরকার বন্দরের বাইরে ওয়্যারহাউস করে দিলে বা করার অনুমোদন দিলে আমদানি-রফতানির সকল পণ্য ওয়্যারহাউসে রাখা যাবে। আমরা এই সিস্টেমটা চাচ্ছি। এটি হলে বন্দরের ভিতরের জায়গা ফ্রি হবে এবং কনটেইনার জট হবে না। ওয়্যারহাউসগুলো বন্দর করে দেবে; তবে কাস্টম হাউসের আওতায় থাকবে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওয়্যারহাউস বাড়ানোর বাফার প্রস্তাবনা নৌপরিবহন মন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে। উনি দেখবেন বিষয়টি।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!