চান্দগাঁওয়ে ৭ স্পটে ‘হিজড়া’ সেজে জুয়া-মাদক বাণিজ্য চালাচ্ছেন ইয়াছিন

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার সাত স্পটে প্রতিদিন বসছে জুয়া-মাদকের আসর। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলে জুয়া ও মাদকের রমরমা বাণিজ্য। আর এসবের নেপথ্যে রয়েছে ইয়াছিন আরাফাত নামের এক যুবক। এলাকায় হিজড়া সেজে তিনি গড়ে তুলেছেন মাদক বিক্রির বড় সিন্ডিকেট। বাবা, ভাই ও বোনকে সঙ্গে নিয়েই তিনি করেন মাদক ব্যবসা।

এসব জুয়া ও মাদকের নেশায় জড়াচ্ছেন এলাকার উঠতি বয়সের যুবকরা। নেশা ও জুয়ার টাকা জোগাড় করতে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ছিনতাইয়ে নামে এসব যুবক। এভাবে দিনের পর দিন চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একেবারেই নীরর। মাদক ও জুয়ায় অতিষ্ঠ অনেক এলাকাবাসীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিকার চেয়ে পোস্ট দিতেও দেখা গেছে।

জানা গেছে, মোহরার রেললাইনের ৮ ও ৯ নম্বর বস্তিতে প্রকাশ্যে দিনেরবেলায় বসে জুয়া ও মাদকের আসর। চান্দগাঁও থানার উত্তর মোহরার অর্ধেক অংশ, পশ্চিম মোহরা, মৌলভী বাজারের পোল বস্তিসহ অধিকাংশ এলাকায় হাতের নাগালেই পাওয়া যায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক। উঠতি বয়সের যুবকরা জড়িয়ে পড়ছেন মাদকের নেশায়। মোহরা থেকে বহদ্দারহাট এলাকায় মাদক বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্মের মূলহোতা হিজড়া সেজে ঘুরে বেড়ানো ইয়াছিন আরাফাত নামের এক যুবক। ইয়াছিনের বাবা লোকমান, ভাই হানিফ এবং বোন নাজুও মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত।

চান্দগাঁওয়ের অন্তত সাত স্পটে চলে জুয়ার আসর। এলাকার একশ্রেণির যুবক ও দিনমজুর জড়িয়ে পড়ছে এসবের নেশায়। সেইসঙ্গে রাতে অলিগলিতে বেচাকেনা হচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজা। জুয়া ও মাদকের টাকা জোগাতে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে মোহরা এলাকার রেললাইনের বিভিন্ন পয়েন্টে মোবাইলসহ নানান জিনিস ছিনতাই করছে একটি চক্র। বিষয়টি নিয়ে কোনো তৎপরতা নেই স্থানীয় প্রশাসনের।

আরও জানা গেছে, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর মৌলভীবাজারের ৯ নম্বর পোল এলাকায় মাদক ব্যবসার অভিযোগে ইয়াছিনের ভাই হানিফকে আটক করে র্যাব। সেখানে বেশ কয়েকটি চক্র ইয়াবা ও জুয়ার ব্যবসায় জড়িত।

এদিকে জুয়া ও মাদক থেকে প্রতিকার পেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মোহরার এক যুবক পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘কি হবে আমাদের মোহরার? প্রকাশ্যে জুয়ার আসর বসতেছে রেললাইন ৮ ও ৯ নম্বর বস্তিতে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পথচারীদের মোবাইল ছিনতাই আর মাদকের রমরমা ব্যবসা। এগুলো দেখার কি কেউ নাই? মোহরার মানুষ কি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছে!’

তিনি আরও লেখেন, ‘মৌলভীবাজার ৯ নম্বর পোল বস্তিতে একটি ভয়ঙ্কর মাদক ও ছিনতাইচক্র রয়েছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করছে একটি চক্র। যেটার সূত্র ধরে একটি খুন পর্যন্ত হয়েছে ও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে দফায় দফায় হামলা পর্যন্ত হয়েছে রেললাইন ৮ ও ৯ নম্বর বস্তির মাদক ও ছিনতাইকারীদের।’

‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি এসবের মধ্যেই বড় হবে নাকি তাদের জন্য সুন্দর একটা মোহরা তৈরি করে রাখব সে সিদ্ধান্ত সকল মোহরাবাসীর নিতে হবে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনার কালুরঘাট থেকে মৌলভীবাজার এবং মৌলভীবাজার থেকে কাপ্তাই রাস্তায় বেড়ে উঠা মাদক ও ছিনতাই সিন্ডিকেটগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন,’—পোস্টে যোগ করেন ওই যুবক।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কালুরঘাট রেললাইনের ৮ ও ৯ নম্বর বস্তিতে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে কয়েকজন যুবকের সহায়তায় চলছে এসব জুয়ার আসর। সেখানে একশ্রেণির যুবক ও মধ্যবয়সী অন্তত ২০ জন লোক জুয়া খেলছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব জুয়ার আসর থেকে মাসোহারা নিয়ে যায় পুলিশের লোক।

মোহরার ৮ নম্বর বস্তিতে থাকেন রিকশাচালক বশির ও ইসমাইল (ছদ্মনাম)। তারা দু’জনই নিয়মিত জুয়াড়ি। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তা নিয়ে বসে পড়েন জুয়ার আসরে। জুয়ায় টাকা হারিয়ে প্রতিদিন দু’জনই লাঞ্ছিত হন বৌয়ের কাছে। তারা বলেন, ‘ভাই, প্রতিদিন কষ্ট করে টাকা রোজগার করি। মন চাই এসব টাকা সংসারের পেছনে খরচ করি। কিন্তু প্রতিদিন যেতে না চাইলেও মনের টানে জুয়ার আসরে চলে যায়। এতে লাভের আশায় কষ্টের টাকা খোয়া যাচ্ছে।’

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঈনুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আপনার কাছে কোনো তথ্য থাকলে আমাকে পাঠান। আমি ব্যবস্থা নেবো।’

ওসি আরও বলেন, ‘আমি এই থানায় আসার পর এসব বন্ধ করেছি। চিহ্নিত এসব এলাকায় নিজেই গিয়ে বেশ কয়েকবার ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। আবারও সেখানে অভিযান চালাব।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!