চান্দগাঁওয়ে ধরা সাতকানিয়ার জামায়াত ক্যাডার রোকন, চরতীর হামলার মাস্টারমাইন্ড

রোকন উদ্দিন। ‘রুকইন্না’ নামেই সাতকানিয়া জুড়ে পরিচিত তিনি। নেতৃত্ব দিয়েছেন অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর উপর হামলায়। সাতকানিয়ায় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে ভোট লুটের কারিগর হিসেবেও তাকে ভাড়ায় নেয় জামায়াত ইসলামীর নেতারা। ওই অঞ্চলে সরকারবিরোধী নাশকতার হোতা হিসেবেও পরিচিত এই দুর্ধর্ষ জামায়াত ক্যাডার। তার গডফাদার মাওলানা শামসুল ইসলাম। যিনি সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াত ইসলামীর বর্তমান নায়েবে আমীর।

বর্তমানে সাতকানিয়ার চরতী ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর ডা. রেজাউল করিমের তত্ত্বাবধানে হামলা, ভাঙচুরসহ নানা সহিংসতার নেপথ্যে আছেন এই রোকন উদ্দিন। সর্বশেষ সর্বশেষ সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, হামলা এ ভাঙচুরের ঘটনায় দিয়েছেন নেতৃত্ব। আর এই ঘটনার পর দিয়েছেন গা ঢাকা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।

চান্দগাঁওয়ে ধরা সাতকানিয়ার জামায়াত ক্যাডার রোকন, চরতীর হামলার মাস্টারমাইন্ড 1

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুর রহমান বলেন, ‘রোকন উদ্দিনের বিরুদ্ধে চরতী ইউনিয়নের সাঙ্গু নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিং প্রকল্পে চাঁদাবাজি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় মামলা রয়েছে। চান্দগাঁও এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সাতকানিয়ায় থানায় সোপর্দ করা হচ্ছে। সেখান থেকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে নেওয়া হবে।’

সাতকানিয়া চরতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবুল হোসেন তালুকদার বলেন, ‘জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শামসুল ইসলাম ও চরতী ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর ডা. রেজাউল করিমের ঘনিষ্ঠ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত রোকন উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া এলাকায় নাশকতাসহ বিভিন্ন সহিংসতায় নেতৃত্ব প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্ব সরকারবিরোধী নাশকতার সময় গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হতো৷’

চরতী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘রোকন উদ্দিন চরতী ইউনিয়নে নাশকতার সঙ্গে জড়িত। সে জামায়াতের সক্রিয় লোক।’

স্থানীয়রা জানান, রোকন উদ্দিনের বাবা মুফতি মিছবাহুল হক ছিলেন সাতকানিয়ার তৎকালীন শান্তি কমিটির কমান্ডার চুড়ামনি শাহ সাহেবের ছেলে রাজাকার ছগীরের সহযোগী। মুফতি মিসবাহুর রহমানের হাতে খুন হন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। তার নেতৃত্বে ওই সময় মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালিদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে সাতকানিয়ার চরতী ইউনিয়নের তুলাতলী হাই স্কুল কেন্দ্রে জামায়াতের ইউনিয়ন আমীর ডা. রেজাউল করিমের নির্দেশে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের উপর হামলা চালায় রোকন উদ্দিনের নেতৃত্বে জামায়াত ক্যাডাররা। তারা ভোট লুট করতে এই হামলা চালিয়েছিল। জামায়াত নেতা ডা. রেজাউল করিমের সঙ্গে রোকন উদ্দিনের বিভিন্ন সভাসমাবেশে অংশগ্রহণের ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

এদিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় কৃষকদের ওপর গুলির ঘটনার পর মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গত ১০ অক্টোবর সাতজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস ড্রেজার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের প্রজেক্ট ইনচার্জ মো. মতিউর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দিয়েছেন। গত ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালতে মামলাটি করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন— গিয়াস উদ্দিন মিন্টু, আব্দুল মালেক, মো. মহিউদ্দিন, নজরুল ইসলাম, জাহেদুল ইসলাম, রোকন উদ্দিন ও মোহাম্মদ রাকিব উদ্দিন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতকানিয়ার চরতি এলাকায় সাঙ্গু নদীতে ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস ড্রেজার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। এ কোম্পানির কাছ থেকে আসামিরা ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা না পেয়ে আসামিরা বিভিন্ন সময় আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এসব ঘটনায় বাদী স্থানীয় থানায় কোনো সমাধান না পেয়ে আদালতে মামলা করেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!