চান্দগাঁওয়ের শতবর্ষী পুকুর ভরাট

মানছে না আদালতের নিষেধাজ্ঞা

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নগরের চান্দগাঁও থানার পাঠানিয়া গোদা এলাকার বায়তুন নূর জামে মসজিদের শতবছরের পুকুর ভরাট করেছে মালিকানা সিন্ডিকেট। শতবছরের এ পুকুর ভরাটের কারণে বেকায়দায় পড়েছেন পুকুর সংলগ্ল মসজিদের মুসল্লীরা। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন না নিয়েই পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না ভরাটকারীরা।

স্থানীয় মুসল্লিরা পুকুর ভরাটে বন্ধের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর পুকুর ভরাট বন্ধে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে অবগত নয় বলে জানান ফায়ার সার্ভিস ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ।

চান্দগাঁও থানার পাঠানিয়া গোদা এলাকার বায়তুন নূর জামে মসজিদের পুকুরটি ভরাট করা হলে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ) এর পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। বিএইচআরএফ মামলা দায়ের করলেও কোন ব্যবস্থাগ্রহণ না করায় পুকুরটি দখল করে স্থাপনাও নির্মাণ করছে ভরাটকারীরা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও কোন ব্যবস্থাগ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন পুকুরটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে। সে সময় তারা দেখতে পান ২১ শতক আয়তনের শতবর্ষী এই পুকুরটি অংশিদারগণ ভরাট করে দোকানপাট, রাস্তাসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।

পুকুর ভরাটের কাজ শুরু করেন ২.৮ শতকের অংশীদার সরওয়ার উদ্দিন, মো. হাসান ও আবদুল হামিদ। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৭৪ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। তারা ক্ষতিপূরণ প্রদান করার পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পুকুরটি পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, সেই স্থানটি ভরাট করে ইট দিয়ে নির্মিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। পরে নোটিশ দিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও সেটি মানা হয়নি।

পুকুর ভরাট বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পক্ষে সংগঠটির চেয়ারপারসন এলিনা খান এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, সিডিএ চেয়ারম্যান এবং জেলা প্রশাসকের নিকট একটি নোটিশ প্রেরণ করেন।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘চান্দগাঁওয়ে শতবর্ষী পুকুর ভরাট’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি মাসবাধিকার সংগঠনের নজরে আসলে সংগঠনের অর্গানাইজিং ডাইরেক্টর এবং চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার সভাপতি এএম জিয়া হাবীব আহ্সান পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিগ্যাল জাস্টিস নোটিশ প্রদান করেন।

কিন্তু নোটিশ পাঠানোর ৩০ দিন পরেও সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে নজর দেয়নি। পরে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এড. এলিনা খান জনস্বার্থে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের আদালতে রিট দায়ের করলে আদালত বিবাদীগণের বিরুদ্ধে রুল নিশি জারি করেন। আদালত ডিসিকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শতবর্ষী এই পুকুরটি মুসল্লীরা ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু পুকুরের অংশীদারগণ আইন না মেনে এই পুকুরটি ভরাট করে ফেলেছেন।

সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার নেত্রী এডভোকেট এলিনা খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, এই যে শহরের পুকুরগুলো ভরাট করে ফেলছে এতে শহরের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বাইতুন নূর জামে মসজিদের পুকুরটি মুসল্লীরা ব্যবহার করত। এভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা অন্যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পেয়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে জরিমানা নিলেও পুকুরটি আগের পরিবেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা না নিলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ডিমান্ড নোটিশ দেওয়া হয় । কিন্তু এরপরও কোন উদ্যোগ না নিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করে মামলা করি।

মানবাধিকার নেতা জিয়া হাবীব আহ্সান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, শহরের পুকুর ভরাট করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা খুব অন্যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। মহানগরীর খাল, নালা-নর্দমা, জলধার, পুকুর, দীঘি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মামলা হওয়ার পরেও চান্দগাঁওয়ের শতবছরের পুকুর ভরাটে কর্তৃপক্ষের কোন দায় নেই। কোনো ব্যবস্থা এখনো তারা গ্রহণ করেনি। দ্রুত যেন এই ভরাটকৃত পুকুরের পুনঃ উদ্ধার করা হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!