চাকরি প্রলোভনে মেয়ে ভাগিয়ে চান্দগাঁও আবাসিকে স্বামী-স্ত্রীর গণিকালয়!

বাকলিয়া-বায়েজিদেও সক্রিয় একই চক্র

চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে নারীদের ভাড়া বাসায় বন্দি করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে শাহেদ ও তার স্ত্রী। সম্প্রতি শাহেদের ফাঁদে পড়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হন লুবনা (ছদ্মনাম), সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় আসেন তিনি। তার সহযোগিতায় চান্দগাঁওয়ের একটি ভাড়া বাসা থেকে সোমবার (২৬ অক্টেবর) লুবনাসহ তিন নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় পতিতাবৃত্তি পরিচালনার দায়ে শাহেদের দ্বিতীয় স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত শাহেদকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ বছর বয়সী লুবনা ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ঘর ছেড়ে চট্টগ্রাম আসেন এক বছর আগে। চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরিও করেছিলেন। কিছুদিন পর ওই কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে তার জীবনে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে। ছোটবেলায় মাতৃহীন হওয়া লুবনার আশ্রয় হয় ইটভাঙ্গা শ্রমিক ফুফু আম্বিয়া খাতুনের ঘরে। আম্বিয়া খাতুনের টানাটানির সংসারে বোঝা না হয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করতে চট্টগ্রাম এসে শেষ পর্যন্ত পড়েন প্রতারকের খপ্পরে।

এ সময় তার পরিচয় হয় মো. শাহেদ নামে এক যুবকের সাথে। শাহেদ তাকে চাকরির সন্ধান দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২১ অক্টোবর (বুধবার) বহদ্দারহাট আসতে বলেন। ওই দিন দুপুর আড়াইটায় চাকরির আশায় লুবনা বহদ্দারহাট আসেন। বহদ্দারহাট থেকে শাহেদ লুবনাকে নিয়ে যান চাঁন্দগাও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ১০ নম্বর সড়কের ২৯৩ নম্বর বাড়িতে। সেই বাসা থেকে লুবনা বাধ্য হন পতিতাবৃত্তিতে।

চান্দগাঁও আবাসিকের ওই বাসায় এসে তিনি শাহেদের শিকার আরও দুই তরুণীকে দেখতে পান। ৪ দিন (২২-২৫ অক্টোবর) এভাবে কাটানোর পর ২৬ অক্টোবর তিনি পালাতে সক্ষম হন। লুবনা কৌশলে পালিয়ে আসেন চান্দগাঁও থানায়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপর দুই তরুণীকে উদ্ধার করার পাশাপাশি অভিযুক্ত শাহেদের দ্বিতীয় স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করেন। শাহেদের বাড়ি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলায়।

উল্লেখ্য, শাহেদের দুই স্ত্রীর মধ্যে প্রথম স্ত্রী ইতোমধ্যে নারী ও শিশু পাচার মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চান্দগাঁও থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক বিমল কান্তি দেব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিন ভিকটিমের একজন কৌশলে পালিয়ে থানায় এসে অভিযোগ করেন। আমরা তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করি। উদ্ধার করে ২৭ অক্টোবর মেডিকেল পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই। পরেরদিন তাদের চট্টগ্রাম মহানগর মূখ্য হাকিমের আদালতে সোপর্দ করি। আদালত ১৮ বছরের কম হওয়ায় একজনকে অভিভাবকের জিম্মায় অথবা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর আদেশ দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘লুবনাকে তার ফুফু বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। অপর দুজনের অভিভাবক না থাকায় নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার আদেশ দিয়েছেন আদালত। শাহেদের সাথে তার স্ত্রীও মামলায় আসামি হওয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আমরা শাহেদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’

উল্লেখ্য, একই অপরাধে চলতি বছরের ৮ জুলাই চান্দগাঁও থানায় দায়ের হওয়া আরেকটি মামলায় অভিযুক্ত শাহেদ।

প্রসংগত, নগরীর বায়েজিদ থানাধীন মৃধাপাড়া থেকে চলতি বছর ১৩ মে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। খুনে অভিযুক্ত নাসির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান খুনের নির্দেশদাতা এবং মিনি পতিতালয় প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর আবদুল হালিম। ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত হালিমের কোন হদিস করতে পারেননি বলে স্বীকার করেন বায়েজিদ থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার।

এছাড়াও একই অপরাধে ১৮ সেপ্টেম্বর মো. তালেব, মো. আব্দুল কাদের ও রুবিনা আক্তার নামের তিনজনকে আটক করে নগরীর বাকলিয়া থানা পুলিশ। এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর রায়হান, সাইফুল, মুন্নি আর সুমিকে আটক করা হয়েছিল একই অপরাধে। ১৬ জুন আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগম এবং আনোয়ারের বন্ধু খোকনকে আটকে পাশাপাশি তিন ঘটনায় ভিকটিমদের উদ্ধার করেছিল পুলিশ।

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!