চাঁদাবাজির প্রমাণ পেলেই শাস্তির কোপ চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবুর ওপর

চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর বিরুদ্ধে কোটি টাকার চাঁদাবাজি মামলায় আদালতে চার্জ গঠনের পর তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করে সত্যতা মিললে নেওয়া হবে কার্যকর ব্যবস্থাও। তিনি ‘চাঁদাবাজ’ হিসেবে আদালতে প্রমাণিত হয়েছেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি।

বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু।

জানা গেছে, গত ৯ মার্চ দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি করে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ জনের আংশিক নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ। কিন্তু কমিটি ঘোষণার আগে থেকে তার বিরুদ্ধে ছিল ১ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ। এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি ছিলেন দেবু।

এর আগে ২০০৭ সালে নগরের পাঁচলাইশ থানার পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায় পুরনো ভবনসহ একটি জায়গা নিয়ে নতুন ভবন তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন প্রবাসী বন্ধন নাথ। পরে ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে ভবন তৈরিতে চুক্তিবদ্ধ হন। দুদিন পর ৯ ফেব্রুয়ারি নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু করলে দেবাশীষ নাথ দেবুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ভবন তৈরি করতে হলে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা বন্ধনকে মারধরসহ পিঠের ডান পাশে গুলি করেন। দেবু বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতায় আসতে প্রাইম ব্যাংকের পাঁচটি চেকের মাধ্যমে তাদের ৭০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন বন্ধন।

২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ৩০ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিলে বন্ধন এক পর্যায়ে ভবন তৈরির কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি বন্ধন নাথ পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরদিন দেবাশীষ নাথ দেবুসহ তার সহযোগী এটিএম মঞ্জুরুল ইসলাম রতনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ নাথ দেবুকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

চলতি বছরের ২১ আগস্ট কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন পঞ্চম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ নারগিস আক্তারের আদালত। বাকি ৫ আসামি হলেন এটিএম মঞ্জুরুল ইসলাম রতন, আবু নাছের চৌধুরী আজাদ, একেএম নাজমুল আহসান, মো. ইদ্রিস মিয়া ও মো. ইমরান হোসেন জিয়া। সেদিন দেবাশীষ নাথ দেবু এ মামলা থেকে তাকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেন।

কিন্তু আদালত শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করেন। আগামী ১ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। এর আগে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল মামলার চার্জগঠনের দিন ধার্য থাকলেও ওইদিন চার্জগঠন হয়নি।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু বলেন, ‘চট্টগ্রাম স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলায় সংগঠনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ফারুক আমজাদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও জানিয়েছেন তিনি।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ফারুক আমজাদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগ একটি ডায়নামিক সংগঠন। এ সংগঠন সব সময় স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করে। সুশৃঙ্খলতার জন্য এ সংগঠন আলোচিত এবং প্রশংসিত। চট্টগ্রাম স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলায় চার্জ গঠন করার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে প্রধান করে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। অপরজন হচ্ছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম আজিম। আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে যথাযথ প্রতিবেদন দেবো। প্রতিবেদন অনুযায়ী কেন্দ্র পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি আইনজীবী এরশাদ হোসেন আসাদ বলেন, ‘নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর চাঁদাবাজি মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের পর আগামী ১ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত। আমরা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বাদি পক্ষের সাক্ষীদের উপস্থাপন করবো। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চার্জ গঠনের অর্থ হল, আদালতের কাছে আসামির দোষ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ দেবু চাঁদাবাজি করেছে। আইন বলে, যদি তিনি সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত চাকরিজীবী হতো, তবে চার্জ গঠনের আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হত। তবে ক্ষমতাসীন দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন অভিযুক্ত ব্যক্তি থাকা চক্ষুশূল বিষয়। বর্তমানে নেতৃত্বে ক্লিন ইমেজের মানুষ প্রয়োজন।’

আরএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!