চসিকের ময়লায় ঢাকা বায়েজিদের গণকবর

ভাগাড়ে পড়ে আছে কোরবানির লক্ষাধিক চামড়া

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ময়লার নিচে ঢেকে যাচ্ছে একটি গণকবর। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলছেন তিনি চসিকে অভিযোগ দিলেও কাজ হচ্ছে না। মেয়রকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানাবেন বলেও তিনি জানান। পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা বলছেন কবরের ওপর কোন ময়লা ফেলা হয়নি, ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দুর্গন্ধমুক্ত রাখা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।

নগরীর বায়েজিদ এলাকার আরেফিন নগর এলাকায় অবস্থিত এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সির গেট থেকে ডানে প্রবেশ করলে হাতের বামে বর্জ্যাগার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ডানের সড়ক দিয়ে অগ্রসর হলে ‘বিশ্ব কবরস্থান’। ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কালুরঘাট বিসিক শিল্প নগরীতে কেটিএস গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছিল ৫৭ শ্রমিক। নিহত শ্রমিকদের ৩৫ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী তাদের কবরস্থ করেছিলেন আরেফিন নগরে। তখন থেকে ওই স্থানের নাম হয় ‘বিশ্ব কবরস্থান’।

রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুর দুইটা। সরেজমিনে বিশ্ব কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায় চসিকের বর্জ্যে সয়লাব সেই গণকবরটি। পাশ দিয়ে ময়লার দুর্গন্ধে নাক চেপে হেঁটে যাচ্ছেন এলাকাবাসী। কোরবানি পশুর চামড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রাস্তায়ও।

স্থানীয় অধিবাসী সালাউদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, গার্মেন্টসের অজ্ঞাত শ্রমিকদের কবর দিয়ে এই স্থানটি সংরক্ষিত করেছিলেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপর এখানে এলাকার আরো মানুষকে কবর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চসিকের ময়লা ফেলা হচ্ছে সেই কবরের ওপরেই। আমরা বারবার অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পাইনি।

স্থানীয় গৃহিণী রোকসানা বেগম বলেন, ‘ওরা তো আমাদের মানুষই মনে করে না। যদি মানুষ ভাবতো তাহলে এভাবে ‘ভদ্রলোকদের’ ময়লায় আমাদের চলাচলের রাস্তাও অপরিচ্ছন্ন করে রাখতো না, কবরস্থানের পবিত্রতাও রক্ষা করতো ’

বিষয়টি অস্বীকার করে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কাজী শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী যিশু বলেন, ‘কবরস্থানে কোন ময়লা ফেলা হয় না।’

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চসিকের ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগকে একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু তারা যথাযথ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আমি লিখিতভাবে মেয়র মহোদয়কে বিষয়টি জানাবো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক, কবরের পবিত্রতা কোনভাবেই নষ্ট করার সুযোগ নেই। কবরস্থানের সংরক্ষিত এলাকায় ময়লা যাতে না ফেলে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিচ্ছি।’

কোরবানি পশুর প্রায় লক্ষাধিক চামড়ার স্থান হয়েছে কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড়ে।
কোরবানি পশুর প্রায় লক্ষাধিক চামড়ার স্থান হয়েছে কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড়ে।

অন্যদিকে, এবার কোরবানি পশুর প্রায় লক্ষাধিক চামড়ার স্থান হয়েছে কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড়ে। যা উন্মুক্ত থাকায় পরিবেশ দূষণের মাত্রা আরো তীব্র হচ্ছে। ময়লার ভাগাড়সহ আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পশুর চামড়া। অথচ চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা দাবি করলেন সব চামড়া মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। সেই বর্জ্যাগারের পূর্ব পাশে রয়েছে আরেকটি কবরস্থান। উত্তর পাশের গণকবরটি ময়লায় ঢাকা পড়ে পূর্ব পাশেরটিও হুমকিতে আছে।

কিন্তু বর্জ্যাগার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে দায়িত্বরত সুপারভাইজার আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘চামড়া ডাম্পিংয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। তবুও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি চামড়া যাতে উন্মুক্ত না থাকে। কিন্তু কিছু কিছু চামড়া উন্মুক্ত আছে। বর্জ্যাগারের আবর্জনা শুকানোর পর আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। তখন দূষণের পথ বন্ধ হবে।’

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চট্টগ্রাম মহানগর) আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘বিষয়টি একান্তই চসিকের। এখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু করার নেই।’

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!