চসিকের অব্যবস্থাপনায় ফুটপাত যেন মরণফাঁদ, অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলো তিন বছরের শিশু

চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশন প্রকৌশল বিভাগের নানা অব্যবস্থায় সড়ক কিংবা রাস্তার অলিগলিতে থাকা ছোট-বড় ম্যানহোলগুলো খোলা ও পরিত্যক্ত নালায় পড়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে হচ্ছে পথচারী। একের পর এক এসব নালায় পড়ে প্রাণও হারিয়েছে অনেকেই। ২০২১ সালের আটমাসে সড়কের নালায় পড়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে এ পর্যন্ত ৫ জন। আহতের সংখ্যা অবেক। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা এলাকায় তিন বছরের ফুটফুটে শিশু কন্যা মায়ের হাত ধরে হাঁটতে গিয়ে ছিটকে পড়ে নালায় তলিয়ে যায়। তাৎক্ষনিক মেয়েকে বাচাতে মা নিজেই নালায় লুটিয়ে পড়ে হাত ঢুকিয়ে শিশুকে উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায় কোমলমতি এই শিশুটি।

শনিবার (২৬ মার্চ) দুপুরের দিকে চান্দগাঁও থানার পাঠানিয়া গোদার খতিব বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন রোজ গার্ডেন কমিউনিটি সেন্টারের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

সুত্র বলছে, গত ৮ মাসে নগরের মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট এবং আগ্রাবাদ এলাকায় নালায় পড়ে প্রাণ হারায় অন্তত পাঁচজন। গত ৩০ জুন মেয়র গলি এলাকায় টিঅ্যান্ডটি কলোনির বাইলেন দিয়ে যাওয়ার সময় চশমাখালে বৃষ্টির পানিতে পড়ে যায় যাত্রীবাহী একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। মূহুর্তেই বৃষ্টির পানির স্রোতে ভেসে যায় অটোরিকশাটি। প্রাণ হারায় অটোরিকশার চালক সুলতান ও যাত্রী খাদিজা বেগম।

২০২১ সালের ২৫ আগস্ট মুরাদপুর এলাকায় রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানি দিয়ে হাঁটার সময় চশমাখালে পড়ে তলিয়ে যান সবজি ব্যবসায়ী ছালেহ আহমেদ (৫০)। নিহতের আরও খোঁজও মিলেনি।

একইসঙ্গে ব্যবসায়ী ছালেহ আহমেদ নিখোঁজের আরও এক মাসের মাথায় আবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আগ্রাবাদ এলাকায়। ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মামার সঙ্গে চশমা কিনে বাসায় ফেরার পথে আগ্রাবাদ মাজার গেইট এলাকায় নালায় পড়ে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যান আন্তজার্তিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া (১৯)। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন টানা পাঁচঘন্টা অভিযান চালিয়ে এক টন আবর্জনা সরিয়ে ৭০ ফুট গভীর থেকে সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে।

এছাড়া ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর ষোলশহর চশমাখালে বন্ধুর সঙ্গে প্লাস্টিকের বোতল কুড়াতে গিয়ে আবর্জনার স্তুপের নিচে তলিয়ে যান পথশিশু মোহাম্মদ কামাল (১০)। নিখোঁজের তিনদিন পর মুরাদপুর মির্জাখাল থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এ ভিডিতে দেখা যাচ্ছে, গত শনিবার দুপুরের দিকে চান্দগাঁও থানার পাঠানিয়া গোদা এলাকায় সাফা মারওয়া ইলেকট্রনিক্স সেন্টারে সামনের ফুটপাত দিয়ে খতিব বাড়ির মসজিদের দিকে দুইজন দুজন মহিলা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন তাদের সঙ্গে ছিল আনুমানিক তিন বছরের শিশু কন্যা। সেও মায়ের হাত ধরে হাঁটছিলো। হাঁটতে হাঁটতে তারা সাফা মারওয়া ইলেকট্রনিক্স সেন্টারের সামনে পৌঁছালে হাত থেকে ছিঁটকে মুহুর্তেই নালায় ঢুকে পড়ে শিশুটি। এ সময় মহিলা দুই জন ফুটপাতে শুয়ে পড়ে গর্তে হাত ঢুকিয়ে শিশুটিকে তুলে নেয়।

শিশুটিকে নালা থেকে বের করার পর বুকে জড়িয়ে কান্না করতে থাকেন মা। মেয়েকে পেয়ে কান্না করতে করতে একপর্যায়ে জ্ঞানও হারিয়ে ফেলেন তিনি। ততোক্ষণে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে পড়ে ওই স্থানে। সবাইকে তাদের শান্তনা দিতে দেখা যায়।

একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারিরা জানান, শিশুটি যে জায়গায় নালায় ঢুকে পড়েছে ওই জায়গায় কোনো ধরনের স্ল্যাব ছিল না। গর্তটি অতিরিক্ত বড় না হওয়ায় চলতি পথে পথচারীদের চোখে পড়ে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকায় সেখানে আরও বেশ কয়েকটি স্ল্যাবের অবস্থায় একই। যেকোনো সময় আরও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। অতিদ্রুত স্ল্যাবগুলো মেরামত করার দাবি জানান স্থানীয় ও নগরবাসি।

তাদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অব্যবস্থাপনার চরম মাশুল দিতে গত পাঁচমাসে পাঁচ পথচারীর মৃত্যু হলেও টনক নড়েনি সংস্থাটির। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম সিটি কর্রোরেশন (চসিক) একে অপরের উপর দায় চাপানোতেই সীমাবদ্ধ। নগরবাসীর একটাই দাবি ফুটপাতের যেখানে স্ল্যাব নাই সেখানে স্ল্যাব দিয়ে যেন মেরামত করে দেয়। কারো মায়ের বুক যেন আর খালি না হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল আলমকে কল করা হয়। তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে পরে কথা বলার অনুরোধ করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এমএ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!