চলে গেলেন আওয়ামী লীগ নেতা সাদেকুননুর সিকদার

না ফেরার দেশে চলে গেলেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা সাদেকুননুর সিকদার।

শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। দীর্ঘদিন তিনি দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টায় সৈয়দবাড়ী মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদকে দাফন করা হবে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, ৩ মেয়ে, ২ ছেলে, পুত্রবধূ, জামাতা, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও রাজনৈতিক শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

সাদেকুননুর সিকদারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এলডিপির সহসভাপতি ও সাবেক সাংসদ নুরুল আলম তালুকদার, রাঙ্গুনিয়া বিএনপির আহবায়ক শওকত আলী নূর, সদস্য সচিব প্রফেসর মো. মুহসিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য অধ্যাপক কুতুবউদ্দিন বাহার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আহমেদ হাসনাতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা।

এক শোক বার্তায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গত ৬০ বছর ধরে রাঙ্গুনিয়া আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে যে ক’জন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সাদেকুননুর সিকদার তাদের অন্যতম। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ আ.লীগ একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিককে হারালো। আমাদের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাদেকুননুর সিকদার ছিলেন নির্ভীক যোদ্ধা। তিনি জনগণের প্রিয় নেতা ছিলেন। তার মৃত্যু আ. লীগের রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। আওয়ামী রাজনৈতিক ইতিহাসে সাদেকুননুর সিকদারের নাম চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।’

মন্ত্রী তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন
মরহুম সাদেকুননুর সিকদার ছিলেন আপাদমস্তক আওয়ামী রাজনীতিবিদ ও ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা। ষাটের দশকের চট্টগ্রামের ছাত্রলীগের রাজনীতিকে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী করতে যে কয়জন মেধাবী ছাত্রনেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সাদেকুননুর সিকদার তাদের অন্যতম।

ছাত্রজীবনের প্রথম থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালে রাঙ্গুনিয়া আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে তিনি যুবলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি রাঙ্গুনিয়া থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৭৭ সালে থানা যুবলীগের সভাপতি হন। যুবলীগের রাজনীতি করলেও ১৯৮০-৮১ সালের দিকে তিনি সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। দুই বার রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সাদেকুননুর সিকদার। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

উল্লেখ্য, সাদেকুননুর সিকদার রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র মো. শাহজাহান সিকদারের বড় ভাই ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য কামরুল ইসলাম চৌধুরীর শ্বশুর। বর্ষীয়ান প্রবীণ এই রাজনীতিবিদকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল দল মত নির্বিশেষে পুরো রাঙ্গুনিয়াবাসী। সেসাথে সাদেকুননুর সিকদারের মৃত্যুতে রাঙ্গুনিয়ার আওয়ামী পরিবারে নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!