চমেকে বহিষ্কারাদেশের বিপক্ষে ‘এক হয়েছেন’ ছাত্রলীগের দুই পক্ষ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অধুনা নাছির-নওফেল দুই গ্রুপকে দলীয় কর্মসূচিসহ সবকিছুতেই ‘দুই পক্ষ’ হিসেবে পাওয়া যায়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর চমেক কর্তপক্ষ উভয়গ্রুপের ৩০ ছাত্রকে বহিষ্কারাদেশ দিলে ‘এক হয়ে’ সেটি প্রত্যাখান করেছেন ছাত্রলীগের দুই পক্ষই।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের নামে পৃথক পৃথক বিবৃতিতে বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে অভিন্ন এই প্রতিক্রিয়া জানায় চমেক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতারা। এক্ষেতে দুই পক্ষই এই বহিষ্কার আদেশে মূল দায়ীদের বাদ দিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত না থাকাদের শাস্তি দেয়ার অভিযোগ করেছেন।

আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের একাংশের দেয়া বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন এমএ কাইয়ুম ইমন, হাসিব রিফাত, মাহাদী বিন হাসিম, আসেফ বিন তাকি রিফাত, মাহমুদুল হাসান, সাহেদ কামাল। তারা সকলেই চমেক ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অন্যদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারীদের মধ্যে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন কে এম তানভীর, অভিজিৎ দাশ, তৌফিকুর রহমান ইয়ান, খোরশেদুল ইসলাম, মোঃ ফয়েজ উল্লাহ, মোহাম্মদ সাইফ উল্লাহ, সাজেদুল ইসলাম হৃদয়।

চমেকে ২৯ ও ৩০ অক্টোবরের সংঘর্ষে যাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা যৌক্তিক নয় দাবি করে আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, ‘বিগত দুই বছর সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় কিন্তু আজ অবধি জড়িতদের কোনোরূপ শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি। আজকের এই সিদ্ধান্তে এমন শিক্ষার্থীদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে যারা ঘটনার সাথে কোনোভাবেই জড়িত ছিল না, বরং জড়িতদের মধ্যে অনেকের নাম অন্তর্ভুক্ত হয় নি।’

তারা আরও বলেন, ‘সহপাঠীকে আক্রান্ত করে উল্লাসে ফেটে পড়া ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’

অন্যদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারীদের বিবৃতিতে বলে হয়েছে, ‘সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ১৬ জনের মধ্যে মাত্র ৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ২৩ জনকে কোন রকম স্বাক্ষ্য প্রমাণাদি ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

তারা আরও বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তে ৬২ তম এমবিবিএস এর শিক্ষার্থী মাহাদী আকিবের ওপর হামলার সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছাত্রনামধারী দুর্বৃত্ত মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে সিসিটিভি ফুটেজ ও দায়েরকৃত মামলায় প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মাত্র ৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বাকীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ২৩ জনের বিরুদ্ধে কোন রকম স্বাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এমনকি তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ দেওয়া হয়নি।’

এদিকে এসব ঘটনায় আ জ ম নাছির উদ্দিন অনুসারীরা আওয়ামী লীগের চিকিৎক নেতা আ ম ম মিনহাজ উদ্দিনকে দায় দিলেও শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারীরা দায় দিচ্ছেন কলেজের প্রিন্সিপালসহ ৩ শিক্ষককে।

আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম শহরের জনৈক চিকিৎসক নেতা আ ন ম মিনহাজুর রহমান যিনি কোনোভাবেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাথে সম্পৃক্ত নন, তার সরাসরি ইন্ধনে এই চক্রটি ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।’

এক্ষেত্রে সকল তথ্য প্রমাণ থাকলেও কলেজ প্রশাসন ‘অজানা কারণে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতারা বলেন ‘ ‘তার (ডা.মিনহাজ) ইন্ধনেই অতীতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের দ্বারা ছাত্রলীগ কর্মী এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হামলার স্বীকার হয়েছে। পর্যুপরি অভিযোগ প্রদান এবং তথ্য প্রমাণসহ উপস্থাপন করা গেলে অজানা কারণে কলেজ প্রশাসন সঠিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে।’

অন্যদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারীদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জনৈক চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা এবং বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার এক চিকিৎসক নেতার প্রণীত শিক্ষার্থীর তালিকা অনুসারে ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শাহেনা আকতার, অধ্যাপক ডা. মনোয়ারুল হক শামীম ও ডা. প্রণয় দত্তের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে একাডেমিক কাউন্সিল এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।’

তবে বক্তব্য ভিন্ন হলেও এক বিষয়ে ছাত্রলীগের বিবাদমান দুই পক্ষই এক জায়গায় সেটি হলো এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাখান করার ঘোষণা দিয়েছে দুই গ্রুপের নেতারাই।

এআরটি/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!