চবি শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে ছুটি দিতে ২৭৫ শিক্ষকের বিবৃতি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে বিদেশে গবেষণার জন্য ছুটি দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭৫ জন শিক্ষক।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে এই আহ্বান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যৌথভাবে আইসিটি আইনে মামলা করায় মাইদুল ইসলাম ৩৭দিন কারাদণ্ড ভোগ করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মাইদুল ইসলামকে বিদেশে গবেষণার জন্য ছুটি দিতে বিশ্ববিদ্যালয় যে বিলম্ব করছে, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ছুটির আবেদনপত্রের বিপরীতে প্রয়োজনীয় সভা না ডেকে বিভাগীয় সভা প্রধান মাইদুলের বিদেশে যাবার সুযোগকে বিঘ্নিত করার অপচেষ্টা করছে প্রশাসন। এ সংক্রান্ত সংবাদ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়েছে। বিলম্বের কারণে নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি মাসে সেশন শুরু হয়ে গেলেও যোগদান করতে পারছেন না তিনি।

উল্লেখ্য, তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় তিনি উচ্চ আদালতের রায় পেয়েছেন এবং সাধারণ নাগরিক ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে তার সব ধরনের অধিকার ভোগ করতে আর কোনো বাধা নেই। উচ্চ আদালতে মামলা স্থগিতের পর রায়ের কপিসহ বিভাগে ছুটির জন্য মাইদুল আবেদন করেন ৪ সেপ্টেম্বর।

প্রসংগত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এক্সট্রা অর্ডিনারি ছুটি নিয়ে বিদেশে যাবার আবেদন করার ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সভা করে সিদ্ধান্ত দেবার কথা। কিন্তু তার আবেদনের পর প্রায় ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও প্ল্যানিং কমিটির সভা কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি বিভাগ থেকে। বিভাগীয় চেয়ারপার্সন পারভীন সুলতানা অপেক্ষা করছেন রেজিস্ট্রারের অনুমতির জন্য।

শিক্ষকরা বলেন, মাইদুল ইসলামকে হয়রানির মধ্য দিয়ে বিভাগের চেয়ারপার্সন বা বিভাগ তার উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ন্যায্য অধিকারকে রদ করেছেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ও সংবিধানসম্মত নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী। এ ধরনের খবর প্রকাশিত হয় আর বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সার্বিক ভাবমূর্তি জাতির কাছে চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জানান, ‘এটা বিভাগ থেকে উদ্যোগ নেবার বিষয়, রেজিস্ট্রারের এ পর্যায়ে করণীয় কিছু নেই।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ২৭৫ শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন ড. মো. কামরুল হাসান, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; গীতি আরা নাসরীন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সামিনা লুৎফা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ; আরিফুজ্জামান রাজীব, সহকারী অধ্যাপক, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ; খাদিজা মিতু, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়; কাজী অর্ক রহমান, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; আ-আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; গৌতম রায়, সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌভিক রেজা ,অধ্যাপক বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; রায়হান রাইন, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মজিবুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; শামস আরা খাঁন, সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসী বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ; কাজী এস. ফরিদ, সহযোগী অধ্যাপক, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কামাল চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রমুখ।

এইচটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!