চবি শাটলে পাথর ছোঁড়ার মরণখেলায় রক্ত ঝরছে শিক্ষার্থীদের

তিন স্টেশনের আশেপাশে ওঁৎ পেতে থাকে টোকাইরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চলন্ত শাটল ট্রেনে বাইরে থেকে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই ঘটছে বাইরে থেকে দুর্বৃত্তদের পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। গত এক সপ্তাহে টানা ৫ দিন পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও পাথর নিক্ষেপ বন্ধ করতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না রেলওয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিষয়টি সম্পর্কে জানেনও তারা।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাতের ট্রেনে বাইরে থেকে ছোঁড়া পাথরের আঘাতে মাথা ফেটে মারাত্মকভাবে আহত হন চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝাউতলা স্টেশন, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন ও ষোলশহর স্টেশনের আশপাশের এলাকাগুলোতে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। স্টেশনের পাশ ঘেঁষা গড়ে ওঠা বস্তি থেকে টোকাইরা পাথর নিক্ষেপ করে। রাত ও বিকেলের ট্রেনগুলোতেই মূলত পাথর নিক্ষেপ করা হয়। আর এর পিছনে অন্যতম কারণ শাটলের ছাদে যাতায়াতকারী টোকাইরা। তারা পাথর নিয়ে ছাদে উঠে নিচে টোকাই ও সাধারণ মানুষদের লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে নিচ থেকে তারাও পাল্টা পাথর নিক্ষেপ করে।

হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শফিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, রাত সাড়ে আটটার শাটল ট্রেনে শহর থেকে আসতেছিলাম। শাটল ক্যান্টেনমেন্ট স্টেশনে আসার একটু আগে হঠাৎ এলোপাতাড়ি পাথর নিক্ষেপ শুরু হয়। একপর্যায়ে একটি পাথর এসে এক শিক্ষার্থীর মাথায় এসে লাগে। মুহূর্তেই রক্তে ভেসে যায় শাটল। পরে আমরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে পাঠাই।

একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী নিলয় অপু। তিনি বলেন, গত শনিবার শাটল ট্রেন ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের কাছাকাছি আসতেই বাইরে থেকে হঠাৎ এলোপাতাড়ি পাথর ছুঁড়তে থাকে দুর্বৃত্তরা। একটি পাথর এসে পড়ে তার হাতে। প্রচন্ড আঘাতে ফুলে যায় তার হাত।

সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসাইন বলেন, আমি দুইবার পাথর নিক্ষেপের শিকার হয়েছি। একবার পাথরের আঘাতে আমার এক বন্ধুর চশমা ভেঙে চোখের নিচে কাঁচ ডুকে যায়। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের একটু আগে ও ঝাউতলা স্টেশনের পাশের বস্তি থেকে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। মূলত টোকাই ছেলেরা পাথর নিয়ে শাটলের ছাদে উঠে নিচের দিকে পাথর মারতে থাকে। পরে নিচ থেকে তারা পাল্টা পাথর নিক্ষেপ করলে আমাদের গায়ে এসে পড়ে। রেলওয়ে ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটু তদারকি করলেই পাথর নিক্ষেপ বন্ধ করা সম্ভব।

ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার এস এম ফখরুল আলম বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। পাথর নিক্ষেপ বন্ধ করতে রেলওয়ে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইয়া বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আমরা আলোচনা করে পাথর নিক্ষেপ বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা পুলিশের ওসি নাজিম উদ্দীন বলেন, বিষয়টি আমরা দেখবো।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!