চবি প্রক্টরের বাড়ি নির্মাণেও ‘ছাত্রলীগ কর্মীর’ চাঁদাবাজি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রক্টরসহ কয়েকজন শিক্ষক মিলে ব্যক্তিগত মালিকানায় নির্মাণ করছেন একটি ভবন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পাশেই একটি জমির উপর এ ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আর সেই বাড়ি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের কাছে গিয়ে এক ছাত্রলীগ কর্মী করে বসে ‘আবদার’।

সে আবদার রাখতে না পারায় ঠিকাদারকে গুনতে হল মাশুল। কারণ সে আবদার ছিল চাঁদা। আর চাঁদা না পেয়ে ঠিকাদারকে বেধড়ক পিটিয়েছে বিতর্কিত ওই ছাত্রলীগ কর্মী। মারধরের অভিযোগ ওঠা ছাত্রলীগ কর্মীর নাম সাদেক হোসেন টিপু।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হল সংলগ্ন ঢাকা হোটেলের সামনে এই ঘটনা ঘটে। প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব যে প্রক্টরের তাঁর বাড়ি নির্মাণে চাঁদা চাওয়া ও ঠিকাদারকে মারধরের বিষয়টিকে চরম ধৃষ্ঠতা প্রদর্শন বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। যদিও বর্তমানে প্রক্টর একাডেমিক কাজে দেশের বাইরে অবস্থান করায় ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী প্রক্টর আতিকুর রহমান।

ছাত্রলীগের কর্মী সাদেক হোসেন টিপু ভিএক্স গ্রুপের নেতা মিজানুর রহমান বিপুলের আস্থাভাজন নেতা হিসেবে পরিচিত। বিপুল সাবেক সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির পূর্ব দিকে লালপাহাড় এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ কয়েকজন শিক্ষকের নির্মাণাধীণ ৮ তলা ভবনের ঠিকাদারি করছেন হেলাল উদ্দিন।

এ বিষয়ে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব প্রক্টরের। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর। এমনকি কোনো সংঘাত থামানো কিংবা অপরাধী আটক করতে হলে পুলিশকেও প্রক্টরের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হয়। এবার যদি সে প্রক্টরের বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে কোনো সন্ত্রাসীর হাতে ঠিকাদারকে মার খেতে হয় তা অবশ্য লজ্জাজনক আমাদের জন্য। শুধু এই একজনই নয়, এটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের কাজ। সে কখনো একা এসব করবে না। তাকে ও তার আশ্রয়দাতাকে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে যদি আইনের আওতায় নেওয়া না হয় তাহলে আমরা বুঝবো বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়ালবডি সত্যিই মেরুদণ্ডহীন।’

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাদেক হোসেন টিপু দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। আমাকে দেখলেই বলে, অ ভাই আঁর মিক্কা এক্কানা চঅ না। (আমার দিকে একটু তাকান)। তখন আমি বলি, তোঁয়ার মিক্কা কি চাইতাম? (তোমার দিকে কি দেখবো)। কিছুদিন আগে জাতীর শোক দিবসের কার্ড একটি দিয়ে সে দুই হাজার টাকা নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ সোমবার বেলা ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে চড়ে প্রকল্পের দিকে যাওয়ার সময় জিরো পয়েন্টে সে আমাকে দাঁড় করায়। তখন সে বলে, তোকে দাঁড়াতে বললে দাড়াস না কেন? আমি বলি কেন দাঁড়াবো? পরে সে কল দিয়ে আমাকে শাহজালাল হলের সামনে দেখা করতে বলে এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে।’

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ঠিকাদার হেলাল বলেন, ‘সে আমাকে বলে তোকে কন্ট্রাকটারি করতে কে বলছে? তোকে তোর মোটরসাইকেলসহ পুড়িয়ে ফেলবো। পরে ১২টার দিকে মোটরসাইকেল দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে আমি বিষয়টা জানাই। এর কিছুক্ষণ পর ঢাকা হোটেলের সামনে হোটেল থেকে বেরিয়ে আমাকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে সাদেক হোসেন টিপু কিল-ঘুষি মারতে থাকে। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আমি প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সাদেক হোসেন টিপুর মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি টহলে ছিলাম। মারধর করতে দেখে এগিয়ে গেলে সাদেক হোসেন টিপু পালিয়ে যায়। পরে প্রক্টরিয়াল বডিকে বিষয়টি অবহিত করি।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. আতিকুর রহমান বলেন, ‘মারধরের ঘটনা শুনেই প্রক্টরিয়াল বডি সেখানে গিয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষকরা এবং ঠিকাদাররা অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগেও সাদেক হোসেন টিপুর নামে বেশকিছু অভিযোগ উঠেছিলো। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুনেছি সাদেক হোসেন টিপুর কোনো ছাত্রত্ব নেই। বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো। যাতে সে ছাড় না পায়।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!