চবির হঠাৎ সিদ্ধান্তে ভেঙে পড়েছেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশজয়ী ছাত্রী

‘কোনো ভুল ছাড়া কেন এক বছর লস দিতে হবে’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী রাফা নানজিবা তোরসা ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ হয়েছিলেন ২০১৯ সালে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এই ছাত্রী মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বিদেশে থাকায় ২০১৯ সালের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। তবে বিভাগ থেকে ওই সময় বিশেষ পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি নেন। কিন্তু করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি আর পরীক্ষায় বসতে পারেননি। এখন যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু কিছু পরীক্ষা হচ্ছে, ঠিক এই সময়ে এসে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে তাকে বলা হয়েছে একবছর ড্রপ দিতে। আর এতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ জয়ী এই ছাত্রী।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসজুড়ে। ওই সময় ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার কারণে সেই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি রাফা নানজিবা তোরসা। এরপর ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় বিশেষভাবে অংশ নেওয়ার আবেদন জানান চবি উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বরাবরে। উপাচার্য সেই আবেদন গ্রহণ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিশেষ পরীক্ষার জন্য ৮০ হাজার ৭৭৫ টাকা পে-অর্ডার পরিশোধসাপেক্ষে বিশেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেন। এই পরীক্ষার অনুমোদন দেয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগও।

তবে এরপরই দেশজুড়ে করোনাভাইরাস হানা দিলে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও। সাম্প্রতিক সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অসমাপ্ত পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা ৫ অক্টোবর এবং তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা নভেম্বরে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তোরসার বিশেষ পরীক্ষার অনুমোদন থাকলেও গত শুক্রবারের (২৯ সেপ্টেম্বর) একাডেমি কমিটির সিদ্ধান্তের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি হঠাৎ তাকে জানান, হয় ৫ অক্টোবরের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে, নইলে ছাত্রত্ব আর থাকবে না।

চবির হঠাৎ সিদ্ধান্তে ভেঙে পড়েছেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশজয়ী ছাত্রী 1

হঠাৎ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ জয়ী এই শিক্ষার্থী। তোরসা বলেন, ‘যেখানে আমার বিশেষ পরীক্ষার অনুমতি আছে সেখানে আমাকে এখন পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। আমি কোনো ইয়ার লস দিতে চাইছি না। সেটার জন্য যেভাবে যে ব্যবস্থা নিতে হয় আমি তাই করতে রাজি। আমি প্রয়োজন হলে সেকেন্ড ইয়ার পরীক্ষা দেবো ৫ অক্টোবর থেকে। করোনার কারণে দেড় বছর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এখন যদি আবার এক বছর ড্রপ হয়, কবে এই শিক্ষাজীবন শেষ হবে?’

‘কোনো ভুল ছাড়া কেন আমার এক বছর লস দিতে হবে’— এমন প্রশ্ন তুলে তোরসা বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেকোনো নিয়ম, নীতি বা রীতি যদি একজন স্টুডেন্টের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, একটা মহামারীর পর ইয়ার লস দিতে বাধ্য করে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলে, শিক্ষার্থীর প্রতি সহনশীল না হয়, সেইসব নিয়ম দিয়ে শিক্ষার্থীদের কী বেনিফিট হচ্ছে বা হবে— সেই প্রশ্ন রাখলাম।’

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি ড. সুজিত কুমার দত্ত বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর স্পেশাল পরীক্ষার বিষয়টি একাডেমিক কমিটির অনুমোদিত ছিল না। তৎকালীন সভাপতি (হেলাল আহমেদ) নিজে এটার প্রসেসিং করেছেন। একাডেমি কমিটির অনুমোদন না থাকায় সে স্পেশালের সুযোগ পাচ্ছে না। তাকে এক বছর ড্রপ দিয়ে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।’

তবে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগেই মাস্টার্স শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দুই শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষ ও প্রথম বর্ষের বিশেষ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তাদের বেলায় কেন ব্যতিক্রম— এমন প্রশ্নের জবাবে সুজিত কুমার দত্ত বলেন, ‘একাডেমিক কমিটির অনুমতি ছিল তাদের।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!