চবির সিন্ডিকেটে ১৭ পদের ৯টিই খালি, পদ পূরণে তবু ‘রহস্যময়’ অনীহা

এক সদস্য আছেন ২৫ বছর ধরে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘সিন্ডিকেট’ পদ শূন্য হয়ে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ৭৩ অ্যাক্ট অনুযায়ী চবি সিন্ডিকেটে ১৭টি সদস্যপদ রয়েছে। নানা কারণে বর্তমান সিন্ডিকেটের নয়টি পদই শূন্য রয়েছে। ফলে অর্ধেকেরও কম সংখ্যক সদস্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিন্ডিকেট সভা।

শিক্ষকদের দাবি, সিন্ডিকেটে শিক্ষক মনোনীত কোনো প্রতিনিধি না থাকায় সিন্ডিকেট সভায় তাদের দাবি তুলে ধরার কেউ নেই। প্রশাসন চাইলে নির্বাচন দিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধির পদগুলো পূরণ করতে পারে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ৭৩ এর ২৫ (বি) ধারা অনুযায়ী ডিন, প্রভোস্ট, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও লেকচারার ক্যাটাগরির ছয়টি পদে শিক্ষকদের নির্বাচিত সদস্যরা প্রতিনিধিত্ব করেন। বর্তমানে যার ছয়টিই শূন্য রয়েছে। এদের মধ্যে ডিন ও প্রভোস্ট প্রতিনিধি নির্বাচন না হওয়ায় শূন্য। এছাড়া অধ্যাপক ক্যাটাগরির প্রতিনিধি অবসরে যাওয়া, সহযোগী অধ্যাপক ও প্রভাষক ক্যাটাগরির প্রতিনিধি পদোন্নতি পাওয়া ও সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরির প্রতিনিধি শিক্ষা ছুটিতে যাওয়ায় এই চারটি পদও প্রায় একবছর ধরে শূন্য। সর্বশেষ এই চার ক্যাটাগরির নির্বাচন হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর।

অ্যাক্টের ২৫ (সি) ধারা অনুযায়ী সিনেট কর্তৃক মনোনীত দুজন সিনেট প্রতিনিধি থাকবেন। এদের মধ্যে একজন রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি, অন্যজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রতিনিধি। এই দুই পদে সর্বশেষ মনোনীত হন গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি এসএম ফজলুল হক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসেবে অধ্যাপক ড. আবদুল করিম। তাদের মেয়াদ শেষ হয় ১৯৯৬ সালের ১৭ আগস্ট। তবে ড. আবদুল করিম মারা যাওয়ায় তার পদটি অনেক বছর ধরে শূন্য। এছাড়া এসএম ফজলুল হক ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে আছেন সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে। দুই বছরের মেয়াদে এসে গত ২৫ বছর পরও তিনি অনৈতিকভাবে সিন্ডিকেটে রয়ে গেছেন।

অ্যাক্টের ২৫ (এফ) ধারা অনুযায়ী সিনেট কর্তৃক মনোনীত একজন বিশিষ্ট নাগরিক সিনেট প্রতিনিধি থাকবেন। এই পদে সর্বশেষ মনোনয়ন পান সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার এল কে সিদ্দিকী। তারও মেয়াদ শেষ হয় ১৯৯৬ সালের ১৭ আগস্ট। তবে তিনি ২০১৪ সালের আগস্টে মারা গেলে তার পদটি ছয় বছর ধরে শূন্য রয়েছে।

অন্যদিকে অ্যাক্টের ২৫ (ই) ধারা অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত শিক্ষক প্রতিনিধির মেয়াদও উত্তীর্ণ। যদিও পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তার পদে থাকার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য না থাকায় সে পদটিও শূন্য রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলেছে চট্টগ্রাম প্রতিদিন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, সিন্ডিকেটে প্রায় ১০ বছর ধরে ডিন ক্যাটাগরির প্রতিনিধি নেই। একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধিও প্রায় ছয় বছর ধরে আছেন। মূলত বর্তমান প্রশাসন পরাজয়ের আশঙ্কায় শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন দিচ্ছে না। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ডিন নির্বাচনে ভিসিপন্থী প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। তাই প্রশাসন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনেও ভরাডুবির আশংকা থেকে নির্বাচন বন্ধ রেখেছে।

তারা আরও বলেন, কোনোভাবেই সিন্ডিকেট অপূর্ণাঙ্গ রাখা ঠিক নয়। দ্রুততম সময়ে শূন্যপদগুলো পূর্ণ করা জরুরি। বর্তমানে জাতীয় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনই হচ্ছে। শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনও দেওয়া হোক। এতে যেকোন সিদ্ধান্ত সর্বজনস্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিন্ডিকেট সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এসএম মনিরুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষক প্রতিনিধি ক্যাটাগরির নির্বাচন দেওয়া যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা পদগুলো পূরণ করে ফেলবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!