চবির সিনেট বসছে ৩২ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিনিধিদের নিয়েই

নানান বাহানায় ভোটে অনাগ্রহী প্রশাসন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর হওয়ার কথা রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন। তবে তিন বছর তো পরের কথা, প্রায় তিন যুগ ধরে হচ্ছে না এই নির্বাচন। ফলে ৩২ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া সেই রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিদের নিয়েই বসতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, বারবার নির্বাচনের দাবি উঠলেও নানা অজুহাতে নির্বাচন দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর ফলে অধ্যাদেশের লঙ্ঘন হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কয়েকজন গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি।

শুধু রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনই নয়, তিন বছর ধরে হচ্ছে না শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন। একইভাবে ৩১ বছর ধরে বন্ধ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনও।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি (২৫ জন) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে। তিন বছর মেয়াদি এ ক্যাটাগরির মেয়াদ শেষ হয় ১৯৮৯ সালে। এ ক্যাটাগরিতে ৩ বার নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে ২৫ সদস্যের নির্বাচিত সেই প্যানেলের ৮ জন পরপারে চলে গেছেন। শূন্য সেই ৮টি পদ। তবুও হচ্ছে না নির্বাচন। ফলে নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েটরা। সিনেটে সর্বশেষ শিক্ষক প্রতিনিধি (৩৩ জন) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালে। তিন বছর মেয়াদি এ প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালে। অন্যদিকে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছে ১৯৯০ সালে।

রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ মঞ্জুর-উল-আমিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক বছর সিনেট অধিবেশনে নির্বাচনের কথা বলি। নানা অজুহাতে প্রশাসন নির্বাচন দিচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে বলা আছে, প্রতি দুই বছরের জন্য সিনেট থেকে একজন রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি, একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রতিনিধি, একজন বিশিষ্ট নাগরিক প্রতিনিধি সিন্ডিকেটে পাঠানোর কথা। ১৯৯৪ সালে গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি এস এম ফজলুল হক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসেবে অধ্যাপক ড. আবদুল করিম ও বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে নির্বাচিত হন সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার এল কে সিদ্দিকী। তাদের মেয়াদ শেষ হয় ১৯৯৬ সালে। এদের মধ্যে ড. আবদুল করিম ও এল কে সিদ্দিকী মারা গেছেন। এর পর থেকে এসব পদে আর নির্বাচন হয়নি। কিন্তু রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এসএম ফজলুল হককেই রেখে দিয়েছেন। কিন্ত এটার কারণ বা রহস্য কী?’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন না দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ অধ্যাদেশের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। যেহেতু উপাচার্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ ছাড়া আইনের ফাঁক-ফোকরের মধ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে উপাচার্য হন, তা তারা এসবের কোন তোয়াক্কা করেন না।’

এ বিষয়ে জানতে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি এস এম ফজলুল হককে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে পরে কল দিতে বলেন। তবে পরে কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সিনেটে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে এই নির্বাচনগুলো হচ্ছে না। পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিনিধিদের পদে থাকার সুযোগ রয়েছে।’ তবে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটসহ সব নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনে আইনি জটিলতা আছে। নির্বাচন করতে গেলেই স্টে অর্ডার দেবে। তাই নির্বাচন দেওয়া যাচ্ছে না।’

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!