চবির সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা

আদালতে অভিযোগ করার দুই বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক সহকারী প্রক্টর ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি করার অভিযোগে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় এ মামলা রেকর্ড করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) আদালত থেকে পাঠানো রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগের নথিকে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া।

তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আদালতের নির্দশনা মতে মামলাটি গত ২৩ তারিখে রেকর্ড করা হয়েছে। এটা ২০১৮ সালেই কোর্টে চলে গিয়েছিল। রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারা থাকায় এটি আদালত সরকারের যথাযথ অনুমোদন নেওয়ার জন্য প্রেরণ করেন। অনুমোদন চলে আসায় আমরা মামলাটি রেকর্ড করি। এটির তদন্ত শুরু হয়েছে। থানার পরিদর্শক তদন্ত মামালটি তদন্ত করছেন।’

জানা যায়, একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি করার অভিযোগ উল্লেখ করে ২০১৮ সালের ১৭ মে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আসাদুজ্জামান তানভীর বাদি হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেহ মো. নোমানের আদালতে দণ্ডবিধির ১২৩ (ক), ১২৪ (ক), ১৭৭, ৫০০, ৫০১ ও ৫০২ ধারায় মামলার আরজি জমা দেন।

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ যুক্ত থাকায় আদালত মামলার আরজি গ্রহণ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা অনুযায়ী সরকারের অনুমতি নিয়ে এই মামলার এজাহার গ্রহণের জন্য পাঁচলাইশ থানাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল জার্নাল অব হিউম্যান সোশ্যাল সাইয়েন্স: সোসিওলজি এন্ড কালচার নামে এক জার্নালে ‘রিলিজিয়াস পলিটিক্স অ্যান্ড কমিউনাল হারমনি ইন বাংলাদেশ: এ রিসেন্ট ইমপাস’ শিরোনামে আনোয়ার হোসেনের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এ প্রবন্ধ জমা দিয়ে ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল আনোয়ার হোসেন বিভাগীয় সভাপতি বরাবরে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির আবেদন করেন। এতে তিনি ওই প্রবন্ধ সংযুক্ত করেন। এরপর ওই প্রবন্ধে প্রকাশিত বিভিন্ন ‘বিতর্কিত’ বিষয় নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দায়ের করা মামলায় বাদি অভিযোগ করেন, প্রকাশিত প্রবন্ধে একাধিকবার শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হলেও একবারও তিনি জাতির জনক কিংবা বঙ্গবন্ধু শব্দটি ব্যবহার করেননি। এতে জাতির জনকের প্রতি আনোয়ার হোসেনের তাচ্ছিল্য প্রকাশ পেয়েছে।

এছাড়া অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রবন্ধে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হিজাব পরিধান, হাটহাজারীর নন্দীরহাটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে ও উপাসনালয়ে হামলা, রামু বৌদ্ধবিহারে সহিংসতা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে ধর্মীয় উসকানি দেওয়ার চেষ্টার করার অভিযোগও আনা হয় আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের দায়ের কর হত্যা মামলারও আসামি আনোয়ার হোসেন। এ মামলায় ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন। জেল থেকে বের হয়ে আনোয়ার আবারও শিক্ষকতায় ফেরেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এমআইটি/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!